বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ১৮ জুন ২০২৫
প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ ৪বছরেও শেষ হয়নি
দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪, ১২:২৬ PM
জরাজীর্ণ ভবন ছেড়ে উন্নত পরিবেশে পাঠদানের লক্ষ্যে চার বছর আগে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। ধীর গতিতে চলছে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। নয় মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছর পেরিয়ে গেছে অথচ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। 

ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় পুরাতন জড়াজীর্ণ ভবনেই চলছে বিদ্যালয়টির পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম।পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়নে। নাম  ৮৩ নম্বর  বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়ন ভিডিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এটি।  

জানা যায়, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এলাকাবাসির উদ্যোগে ১৯৮৮সালে ছোট টিনশেড ঘরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেতাগী-সানকিপুর ভিসিডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে ২০০০সালে তিন কক্ষের একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ওই ভবনেই বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পরবর্তীতে ভবনটি জড়ার্জীণ হয়ে পড়লে স্থানীয় সরকারি প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এখানে একটি নতুন ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ৯৯লাখ ৫৭হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যায়টির নতুন দোতলা ভবন নির্মানের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২০সালের ১০সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। ভবনটির ভিত্তিসহ পিলার স্থাপন নির্মাণ শেষে একতলার ছাদের সেন্টারিংয়ের কাজ শুরু করেন। এরপর অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রাখেন। 

এদিকে ২০২১সালের ৩০জুন এর বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নয় মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে ২০২৩সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বাড়ানো হয়। কিন্তু সর্বশেষ সময়সীমা পাড় হলেও ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোমলমতি শিশুরা স্কুলের পুরোনো একতলা ভবনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই একতলা পাকা ভবনের চারটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে লাইব্রেরি ও শিক্ষকদের বসার জন্য কয়েকটি চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। অপর তিনটি কক্ষে পাঠদান চলছে। এদিকে পুরোনো ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে শ্রেনিকক্ষে পড়ে রয়েছে। ছাদের ভিমের পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। লোহার রড মরিচা ধরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই শিফটে চলছে বিদ্যালয়ের শ্রেনি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম। তবে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় শিক্ষকরাও স্কুল ভবনে আতঙ্কে থাকে, কখন ছাদের পলেস্তরা খসে গায়ে পড়ে। আসলে দ্রুত স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ এলজিইডি কার্যালয়ে অবহিত করছেন বলে জানান শিক্ষকরা।

এদিকে বিদ্যালয়ের মাঠের নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বালু, পাথর, খোয়া, ইট, রড, কাঠ-বাঁশ ইত্যাদি। মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখায় শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। 

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আপন চন্দ্র অধিকারীসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাদের স্কুল ভবনটি পুরোনো। পলেস্তরা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। মাঠে খেলাধুলা করতে পারছেনা তারা। তবে নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে ভালো পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে বলে জানান ওই শিক্ষার্থী। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব জানান, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩০জন শিক্ষার্থী আছেন। এর মধ্যে ৭৩টি মেয়ে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পুরাতন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বর্ষাকালে ছাদ থেকে পানি পড়ে। প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। রডে মরিচা ধরে গেছে। শিশু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্কুল ভবনটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

ভবন নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্মান কাজের ঠিকাদার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, কাজের শুরুতে করোনার প্রভাব থাকায় শ্রমিক সংকট ছিল। পরবর্তীতে প্রধান শ্রমিকের স্ত্রীর মৃত্যুজনিত কারনে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবার প্রচন্ড তাপদাহের কারণে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজে ফিরছিল না। তবে নির্মাণ শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। দ্রুত বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। 

এবিষয়ে দশমিনা উপজেলার সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মরিয়ম পারভীন জানান, আসলে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভবনটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এলজিইডির দশমিনা উপেজলা প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ও পরে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় ভবনটির নির্মান কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে  একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং স্কুল ভবনটির নির্মান কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত