বরগুনার তালতলীতে ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। ঘুর্ণিঝড় শুরুর আগে গত রবিবার সন্ধ্যা থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করে মানুষ। এরপর টানা কয়েক ঘন্টা রেমালের তান্ডবে এ উপজেলায় ৬৫০টি ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
ঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টা পরেও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলোর প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাড়িতে ফিরতে পারছেনা। বাড়িঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও পানি বন্দি থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রেই থাকতে হচ্ছে তাদের। উপজেলার একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মোঃ তানজীম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা। ঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টার পরেও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় বাড়িতে ফিরতে না পারা পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেন তারা।
আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, রবিবার রাতেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জয়াল-ভাঙা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেন স্থানীয় রোকেয়া বেগম। পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকায় খালি হাতেই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। পরের দিন ঝড় থামলেও ঘড়-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। অন্য দিকে বাড়ির চারপাশে অথৈ পানি থাকায় এখনো তার পরিবার নিয়ে ঐ আশ্রয়কেন্দ্রেই আছেন তিনি।জয়ালভাঙা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে রোকেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,রাতের বাতাসে ঘর-বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। বাড়ির চারদিকে পানি থই থই করছে। এখন হাতে টাকাপয়সা নাই। কোথাও থেকে ধার আনতে হবে নতুর ঘর তৈরির জন্য। ঘর যত দিনে না তৈরি করতে পারবো ততোদিন এখানেই থাকতে হবে।
রেমালের প্রভাবে পানিবন্দি হওয়া নলবুনিয়া আশ্রয় কেন্দ্রে ঐ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নেয়। এসব পরিবারের পুরুষদের বেশির ভাগই জেলে। কেউ কেউ দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন ও রিকশা চালান। তাঁদের অনেকের বাড়িঘর পানিবন্দি হয়ে আছে। কারও কারও ঘর পুরো ভেঙে পড়েছে। কারও ঘরের বেড়া, মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের আসবাব, কাপড়চোপড় পানিতে ভেসে গেছে। তাই তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
ফকিরহাটের সকিনা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পরিবার এখনো বাড়িতে ফেরেনি। ৫টি কক্ষে আছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। কেউ মেঝেতে শুয়ে আছেন কেউ অন্য কক্ষে বেঞ্চ দিয়ে ভাগ করে থাকছেন বাড়িঘর হারানো পরিবার। প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোই এখন তাদের একমাত্র ভরসা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন,৫৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন। একদিকে পানি বন্দি অন্যদিকে বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা। এই মানুষদের খাবারসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে প্রশাসন থেকে।