শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫
মঠবাড়িয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, হামলা ও অগ্নিসংযোগ
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ৭:৩৬ PM
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন পরবর্তী হামলার ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির কর্মী সমর্থক ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে পালাক্রমে হামলার অভিযোগ উঠেছে। 

গত রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর সন্ধ্যায় উপজেলার জানখালী বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রফিক হাওলাদার এর বসতঘরে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ওই মুক্তিযোদ্ধার বসতঘর ভাঙচুর করে। ধারারো অস্ত্র দিয়ে টিনের ঘরের বেড়া কুপিয়ে ভাঙচুর করে। এসময় ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রিজিয়া বেগমকে মারধর করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ লাাইলী বেগম অভিযোগ করেন, তাদের পরিবার আনারস প্রতীকের সমর্থন করায় এ হামলা করা হয়। সন্ত্রাসীদের ভ‌য়ে তারা কোনো মামলাও করতে পারছেন না।

এছাড়া সোমবার গভীর রাতে উপজেলার বড়মাছুয়া ফেরীঘাট বাজারের বাসিন্দা মাসুম হাওলাদার এর বসতঘরে দুর্বত্তরা অগ্নিসংযোগ করে । এতে পরিবারটির বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

মাসুম হাওলাদার অভিযোগ করেন, আমরা আনারস প্রতীকের সমর্থক হওয়ায় গত সোমবার ভোটের পরের দিনে আমার মেয়ে পারভীন আক্তার বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে বসে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম এর স্ত্রী রেনু বেগম আমার মেয়েকে মারধর করে। 

বড়মাছুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মাইনুল ইসলাম জানান, সোমবার দিনগত রাতে খেজুরবাড়িয়া গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা মো. রাকীব হোসেন ও মো. শহীদুল ইসলামকে একদল সন্ত্রাসী পথে আটকে পিটিয়ে আহত করে।

একই রাতে উত্তর বড়মাছুয়া গ্রামের আশীষ অধিকারির বাড়িতে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা বসতঘর ভাংচুর করে মালামাল তছনছ করে। ভাই শচীন মিস্ত্রীকে সন্ত্রারীরা মারধর করে। এছাড়া একই রাতে বড়মাছুয়া ৭টি ঘরে অজ্ঞাত চোরের দল হানা দিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। ফলে এলাকায় সহিংসতার আতংক ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে মঙ্গলবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শামীম শাহনেওয়াজ নির্বাচন পরবর্তী সহিংতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুরোর সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি হামলাকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজ বরেন, এবার উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি জামাত দোয়াত কলমের সমর্থনে নির্বাচনী তৎপরা চালিয়ে নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। হিন্দু ভোটারদের ভোট দিতে বাঁধা দিয়েছেন। এলাাকায় আতংক সৃষ্টি করেছেন। এখন নির্বাচনে জয়ী হয়ে তারা আরও সহিংসতা ঘটনাচ্ছেন। পুলিশকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ‌্য কম‌প্লে‌ক্সের ডা. ফেরদৌস প্রিন্স বলেন, গত সোমবার বিকেল থেকে উভয় পক্ষের হামলায় ১৭জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান বাকী দুজনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

গুরুতর আহতরা হলেন, জানখালীর ছোটমাছুয়া গ্রামের মুজাহার আলী মুন্সির ছেলে সিদ্দিকুর রহমান ও একই গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে মো. দুলাল। 

উল্লেখ্য, নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর থেকে আনারস প্রতীক ও দোয়াত-কলম প্রতীকের সমর্থকরা হামলা পাল্টা হামলায় লিপ্ত হয়। তবে পুলিশ এসব ঘটনায় তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ ওঠে।

গত রবিবার এ উপজেলায় তৃতীয় ধাপের স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের দিন রিয়াজ আহম্মেদ (আনারস) ও বায়েজিদ আহম্মেদ (দোয়াত-কলম) এর সমর্থকদের উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশত আহত হয়। উভয় পক্ষের গুরুতর আহত ৩৭জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। নির্বাচনের দিন নানা স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ও নির্বাচন পরবর্তী সংহিসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত উভয় পক্ষের শতাধিক কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। 

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন্স) আব্দুল হালিম বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী যেকোন সহিংস ঘটনা পুলিশ কঠোরহস্তে দমন করায় প্রস্তুতি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত