সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২৬ কার্তিক ১৪৩২
সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫
যমুনায় বাড়ছে পানি, ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪, ১২:৩৪ PM
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। বিরাজ করছে বন্যা আতঙ্ক। চরাঞ্চল ও নিচু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বিগত বছর ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন ভাঙন কবলিত মানুষ। ইতোমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

শনিবার (২২ জুন) সকালে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

গত বছর বন্যায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা গাইড বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, ছোট বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, গেল বছর ভাঙনরোধে খানুরবাড়ী, চিতুলিয়াপাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেগুলো এখন ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলে। দরিদ্র মানুষের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলা হয় না।

গত বছর ভাঙনের শিকার একাধিক ব্যক্তিরা বলেন- শুকনো মৌসুমে বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীতে জেগে ওঠা চর কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। যার কারণে নদীতে পানি আসলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।

যমুনা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত ভালকুটিয়া গ্রামের জোবাইদা হেলেন বলেন, যমুনা নদীটি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক থেকে দেড় মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে আমাদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের থাকার জায়গা টুকুও ভেঙে যাচ্ছে। অতি দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ না করলে আমরা বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি- খাবার চাই না, আশ্বাস চাইনা যমুনা পূর্বপাড়ে একটি স্থায়ী বাঁধ চাই।

চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জিলকত, নজরুল ইসলাম ও কোরবান আলী জানান, যমুনা নদীতে গত কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ছে। এতে পানি বাড়ার সাথে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যেকোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে ঘরবাড়ি। গত বছর বসতভিটা ভেঙে যেটুকু থাকার জায়গা ছিল সেটি এবারও চোখের সামনে নদী গর্ভে বিলীনের পথে। এখন ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেলে আমাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবে না। পরিবার পরিজন নিয়ে নিঃস্ব হয়ে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন- কিছুদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু করেছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙনরোধে ঊর্ধ্বতন দপ্তরে অবগত করাসহ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। তারা ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন- বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এসব জায়গায় জিওব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি না হয়।‌ এছাড়া ওই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবনা রয়েছে। কাজ শুরু হলে স্থায়ী বাঁধ হয়ে যাবে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত