১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গণভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
বৈঠক শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে।এর আগে গত ১৯ জুলাই ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠােক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে জঙ্গিবাদী কাজ হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-শিবির, বিএনপির জঙ্গীরা আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে ওই শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত; এরাই কিন্তু এবং জঙ্গি... এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোনো রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্যটা এখন বোঝা যাচ্ছে যে, কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সেবা দেয়, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করে, সেটাই ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা।’
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে মন্তব্য করে টানা চার বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বব্যাপী একটা মর্যাদার আসন পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে চলে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দল মনে করে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সন্ত্রাস এবং নাশকতা হয়েছে এর পিছনে জামায়াত-শিবির কলকাঠি নেড়েছে।
১৪ দলের নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, জামায়াত-শিবির হলো সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচার হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নির্বাচন কমিশন যেহেতু জামায়াতের নিবদ্ধন বাতিল করেছে সেজন্য এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সময় এসেছে। কারণ একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী চরিত্র তাদের এখনও বদলায়নি। ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় যে সন্ত্রাসী তাণ্ডব হয়েছে এর মূল কারিগর ছিল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবির।
বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ১৪ দলের বৈঠকে পাস হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দুষ্কৃতিকারীদের আগুনে পুড়ে যাওয়া বনানীর সেতু ভবন ও মহাখালীর দুর্যোগ ভবন সোমবার দুপুরে পরিদর্শন করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী ১৪ দলের নেতারা।সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে নেতারা সেখানে যান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় পার্টি (জেপি)’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী),বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং গণতন্ত্রী পার্টি, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ, গণ আজাদী লীগ, ন্যাপ, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।