শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫ ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫
দুর্নীতির অভিযোগে ঠিকাদারসহ ৩ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:০২ PM
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভাই ঠিকাদার নাসির উদ্দিন লিঠু এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট বাদী হয়ে গত সোমবার দুদকের পিরোজপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় আসামীরা হলেন- পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান, বরিশালের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র সরকার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী শৈলেন্দ্র নাথ মন্ডল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজের সত্তাধিকারী নাসির উদ্দিন লিটু।

আসামীদের মধ্যে প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান অবসরে গেছেন। দুলাল চন্দ্র সরকার খুলনা সার্কেলের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন এবং শৈলেন্দ্র নাথ মন্ডল ঝালকাঠী জেলায় সহকারী প্রকৌশলীর পদে রয়েছেন। ঠিকাদার লিটু বরিশাল নগরীর খিরোদ মুখার্জী লেনের বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে। ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৫ জুন নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সাবেক মন্ত্রী নানকের ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ’কে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্মাণ প্রকল্পে দুটি আবাসিক ও একটি বহির্বিভাগ ভবন নির্মাণের কথা ছিল। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।

জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের নকশা-প্রাক্কলন অনুসরণ না করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে ঠিকাদার মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে নির্মাণ কাজ ফেলে রাখে। তবে ওই কাজের বিপরীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। ওই ঘটনার পর ২০১২ সালের ১৯ মার্চ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৫ জনের সমন্বয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে সময়ে কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ করেছে। কিন্তু ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ না করেই অতিরিক্ত ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে। তবে অতিরিক্ত টাকা উত্তেলন করে নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এদিকে, নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না করায় ২০১৪ সালের ২৫ জুন নূরই এন্টারপ্রাইজের কার্যাদেশ বাতিল করে এবং নির্মাণাধীন ভবনের কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নেওয়া অতিরিক্ত টাকা আদায় বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় নি কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে দুদক। কার্যাদেশ নিয়ে কাজ ফেলে রেখে সরকারের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনসহ কাজের অতিরিক্ত ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পায় দুদক। এছাড়া তদন্তে প্রকল্পের ভবনগুলোর ফাউন্ডেশন কলামকে দুর্বল করে ভবনের স্থায়িত্ব কমিয়ে সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধনের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক।

এ বিষয়ে দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, মামলার আসামীরা সরকারী অর্থ আত্মসাৎ এবং রাষ্টীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করে দন্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৫১১/১০৯ ধারা এবং তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভাই ঠিকাদার নাসির উদ্দিন লিঠু নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না করায় নূরই এন্টার প্রাইজের দরপত্রের কার্যাদেশ বাতিলের পাশাপাশি নির্মাণাধীন ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পরিত্যক্ত ওই ভবনের পাশেই নতুন করে ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ‘মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩১ মে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে দেখতে পান, নির্মাণ কাজের মাত্র ১৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ওই বছরের ১ জুন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করেন তিনি। পরে মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজের কার্যাদেশ বাতিল করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি আদালতে চলমান থাকায় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান আইনি জটিলতায় আটকে আছে।

এ বিষয়ে পিরোজপুর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভিলা ফেরদৌসী বলেন, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের কার্যক্রম প্রধান কার্যালয় করছেন। আর আমি পিরোজপুর যোগদান করেছি মাত্র এক মাস আগে। তবে জানামতে, উক্ত ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ করেছিল। কাজের ধীরগতি ও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে প্রধান কার্যালয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নতুন ভবনটির কাজের জন্য পুনরায় দরপত্র আহবান করা যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলে প্রধান কার্যালয় থেকে নতুন করে দরপত্র আহবান করা হবে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত