জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘ADM-LAB: Living Labs for Adaptive Delta Management in Bangladesh’ প্রকল্প বাংলাদেশের বদ্বীপ ব্যবস্থাপনায় এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)।
গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরিতে চারটি গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশনের (GED) সদস্য ড. মুঞ্জুর হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হিজ এক্সেলেন্সি মি. ইয়োরিস ভ্যান বোমেল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যার ভূগোল ও জীবনযাপন বদ্বীপভিত্তিক বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এই অঞ্চলের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে। ADM-LAB প্রকল্প সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ, যা বদ্বীপ ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্প শুধু গবেষণালব্ধ তথ্য সরবরাহ করবে না; বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠী, কৃষক, মৎস্যজীবী ও নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণে একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার (Living Lab) গড়ে তুলবে, যেখানে মাঠপর্যায়ে বাস্তব পরিবর্তনের ধারা শুরু হবে। এটি ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা–২১০০’ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
উপাচার্য আরও যোগ করেন, “চারটি প্রকল্পের মধ্যে পবিপ্রবির প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমি গর্বিত। এটি আমাদের তরুণ গবেষকদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আশার বার্তা।”
পবিপ্রবির এই প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে নেদারল্যান্ডসের Wageningen University and Research (WUR) এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ও গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন।
দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি গবেষক, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পবিপ্রবির পক্ষ থেকে প্রকল্পের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন।
তিনি বলেন, “ADM-LAB প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বদ্বীপ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী মডেল তৈরি করতে চাই, যেখানে কৃষক, মৎস্যজীবী ও নীতিনির্ধারক একসঙ্গে কাজ করবেন। নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তি ও বাংলাদেশের সক্ষমতার সমন্বয়ে এটি বদ্বীপ অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন ও অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান এবং অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান। অতিথিরা আশা প্রকাশ করেন, ADM-LAB প্রকল্প বদ্বীপ অঞ্চলে জলবায়ু অভিযোজন ও টেকসই উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।