নয়জন পুরুষ শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন।
আজ শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) ওসি সাজ্জাদ রোমন বলেন, অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ায় ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সমকামিতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মামলায় গ্রেফতারের পর অধ্যাপক এরশাদ হালিমকে শুক্রবার কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম।
এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পদার্থবিজ্ঞান মাইনর ল্যাব পরীক্ষায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের একজন ছাত্র। অধ্যাপক বাদীর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাকে তার মিরপুর মডেল থানাধীন পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় যেতে বলেন।
এরপর ওই ছাত্র সরল বিশ্বাসে অধ্যাপকের বাসায় যান। সেখানে অধ্যাপক তাকে জানান, তিনি অসুস্থ এবং নার্ভের সমস্যার কারণে মেয়েদের স্পর্শে কোনো অনুভূতি পান না, তাই তার স্ত্রী তার সঙ্গে থাকেন না; বরং ছেলেদের হাত শক্ত থাকায় তিনি ছেলেদের স্পর্শে অনুভূতি পান। এসব বলার পর তিনি রুমের দরজা–জানালা ও লাইট বন্ধ করে দেন। এরপর বাদীকে বিছানায় বসতে বলেন এবং শরীর ম্যাসাজ করতে বলেন। বাদী ইতস্তত বোধ করলেও বাধ্য হয়ে ম্যাসাজ করেন। পরে অধ্যাপক ওই শিক্ষার্থীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। শিক্ষার্থী বাধা দিলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পুরুষাঙ্গ ধরে অমানবিক নির্যাতন চালান।
পরদিন ওই শিক্ষার্থী হলে থাকার সময় অধ্যাপক তাকে ফোন করে জানান, তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলেছেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিকেলের শিফটে পরীক্ষা দিতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাকে আবার আগের ঠিকানার বাসায় যেতে বলেন। কিন্তু অধ্যাপকের সমকামী আচরণের কারণে বাদী সেখানে না গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যাপক মোবাইলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন এবং দ্রুত ঢাকায় ফিরে এসে তার বাসায় রাত্রিযাপন করার জন্য ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।
পরে ওই শিক্ষার্থী গ্রামে ১০দিন থাকায় এবং ফোন রিসিভ না করায় অধ্যাপক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে ঢাকায় আসার নির্দেশ দেন। বাদী ঢাকায় ফেরার পর ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টায় অধ্যাপকের হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে তার বাসায় যান। সেখানে যাওয়ার পর অধ্যাপক বাদীর ফোন না ধরা ও দেখা করতে না যাওয়ার বিষয়ে চড়–থাপ্পরসহ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এরপর রুমের দরজা–জানালা বন্ধ করে বাদীর পরিহিত শার্ট–প্যান্ট খুলতে বলেন। বাদী রাজি না হলে পুনরায় মারধর করা হয় এবং বাধ্য হয়ে তিনি পোশাক খুলতে বাধ্য হন। এরপর অধ্যাপক বাদীর স্পর্শকাতর স্থান ধরে স্পর্শ করতে থাকেন এবং নিজে মাস্টারবেশন করেন। একই সঙ্গে বাদীকে অস্বাভাবিক যৌনকর্মে রাজি করানোর চেষ্টা করেন।
‘বাদী রাজি না হলে অধ্যাপক আবার তার পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ চেপে ধরেন। যন্ত্রণায় বাদী বিছানায় উপুড় হয়ে পড়েন। তখন অধ্যাপক ওই শিক্ষার্থীর সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হন। বাদীর চিৎকার ও প্রতিরোধ সত্ত্বেও অধ্যাপক নির্যাতন চালিয়ে যান এবং পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ শক্ত করে টান দেন। এতে বাদী জ্ঞান হারান।’
পরদিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টায় বাদীর জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি অণ্ডকোষে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং ফুলে থাকা অবস্থায় দেখতে পান। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারছিলেন না। সকাল সাড়ে ৭ টায় অধ্যাপক তাকে বাসা থেকে বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসে করে হলে নামিয়ে দেন এবং ঘটনা কাউকে না বলতে ভয়ভীতি দেখান।