নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন আজ। চলে যাওয়ার এত বছর পরও লেখকের জন্মদিনটি এখনও পাঠকদের কাছে বিশেষ দিন। তাঁর লেখায় কখনো কেউ হিমু হতে চেয়েছে আবার কেউ হতে চেয়েছে রূপা। তবে বাকের ভাইয়ের চরিত্রটি হতে চেয়েছিল সব বয়সের ছেলেরা। নির্মাণের মহান কারিগর তার যাদু দিয়ে বদলে দিয়েছিলেন নির্মাণের বাঁক।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে আজ নুহাশপল্লীতে থাকছে নানা আয়োজন। পাশাপাশি লেখকের জন্মস্থানসহ সারা দেশেই থাকছে হুমায়ূন ভক্তদের নানা অনুষ্ঠান।
মিসির আলী
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম কাজল। বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও গৃহিণী মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
জাফর ইকবাল ও আহসান হাবিবের সাথে হুমায়ূন আহমেদ
কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তাঁর ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
" align=
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে কথাসাহিত্যিক, গল্পকার, গীতিকার, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও।
নন্দি্ত নরকে
১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
জোছনা ও জননীর গল্প
বাংলাদেশে পাঠকপ্রিয় এ লেখক দুই শতাধিক ফিকশন ও নন-ফিকশন লিখেছেন। হিমু, মিসির আলির মতো চরিত্র দিয়ে লাখো-কোটি পাঠক ও ভক্ত তৈরি করেছেন এই কথার জাদুকর।
মধ্যাহ্ন
হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অন্যতম গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ূন আহমেদকে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক দেয়া হয়।
হিমুসমগ্র
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে তাঁর প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদই প্রথমবার বাংলাসাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে জনপ্রিয় করেন।
এবং হিমু...
হুমায়ূন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, আজ হিমুর বিয়ে, হিমু রিমান্ডে, মিসির আলীর চশমা, আমিই মিসির আলী, দিঘির জলে কার ছায়া গো, কিছু শৈশব, হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, আগুনের পরশমণি, পাপ ৭১, শ্রাবণ মেঘের দিন।
দেয়াল
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে' প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। উপন্যাসটি প্রকাশের পরই সাড়া জাগায়। তিনি ১৯৯৪ সালে 'একুশে পদক' লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
ঘেটুপুত্র কমলা
দুই দুয়ারী
চন্দ্রকথা
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'শ্যামল ছায়া'
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া ও ঘেটুপুত্র কমলা। হুমায়ূন আহমেদ প্রায় নব্বইটি একক নাটক পরিচালনা করেছিলেন। এগুলোর বেশিরভাগই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং এই সময়ে এসেও সেই পুরনো নাটকগুলো দেখে এবং মুগ্ধতা প্রকাশ করে দর্শক।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
মেহের আফরোজ শাওন
১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নুহাশ, শীলা, নোভা, বিপাশার সাথে গুলতেকিন আহমেদ
পিতার কফিনের পাশে ক্রন্দনরত নুহাশ
২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ।
প্রিয় নুহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয় হুমায়ূন আহমেদকে
২৪ জুলাই তাঁকে দাফন করা হয় তাঁরই সযত্নে গড়ে তোলা প্রিয় নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
হিমু ও রূপা
সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই হুমায়ূন আহমেদের ছিল সাবলীল বিচরণ। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ তথা সবক্ষেত্রেই তাঁর লেখনি বাংলা সাহিত্যে ভিন্নমাত্রা দিয়েছিল। এজন্যই বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক বলা হয় তাঁকে। মৃত্যুর পরেও তিনি পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন।