বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দরকার স্মার্ট জনগোষ্ঠী
ড. নিয়াজ আহম্মেদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪, ১১:৩৫ AM
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিশ্চিত করার পর একে আরো এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও বিশ্বের কাছে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে তুলে ধরার মানসে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছি। অনেকগুলো ভোগ্য পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানিতে আমরা একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছি।

বাংলাদেশ আজ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। বিশ্ব আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে এর অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থানের পেছনে কাজ করছে সরকারের ধারাবাহিকতা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব।

একটি সরকারের ভিশন এবং মিশন সঠিক না হলে সেই সরকার থেকে মানুষ বেশি সুবিধা পায় না। ২০০৮ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হলো, তখন অনেকে বিদ্রুপ করতে পিছপা হয়নি। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এখন সবাই আমরা এর সুফল ভোগ করছি। এখনো যে তারা স্মার্ট বাংলাদেশের কথাকে ব্যঙ্গ করছে না, তা নয়। তবে একসময় তারাও বুঝতে পারবে স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে কিভাবে সুফল পাওয়া যায়।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সব কিছুই স্মার্ট হতে হবে। যে কাজটি বেশি করা দরকার তা হলো স্মার্ট জনগোষ্ঠী তৈরি করা। আর স্মার্ট জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় স্মার্ট হতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে আমাদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আরো বেশি করে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে।

আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, টেকনোলজি—সব কিছুই হতে হবে স্মার্ট। একসময় পোশাকি স্মার্টকে আমরা স্মার্ট হিসেবে গণ্য করতাম। ভালো পোশাক পরলে আমরা তাকে স্মার্ট বলতাম, কিন্তু এখন তা বদলে গেছে। আমাদের কাজকর্ম, চিন্তা-চেতনা, মনমানসিকতা, যোগাযোগ, টেকনোলজি—সব ক্ষেত্রে আমাদের স্মার্ট হতে হবে। কোনো জায়গায় একটু ফাঁক রাখলে চলবে না। অর্থনীতির চাকা আরো সচল রাখা, সামাজিক উন্নয়ন বেশি ঘটানো এবং একটি টেকসই ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা যদি হয়, তাহলে আমরা এগিয়ে যাব। এই কাজগুলো করার জন্য দরকার দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানুষ, যারা স্মার্ট। যাদের কাজে থাকবে না দুর্বলতা বা ফাঁকফোকর। কাজটি সঠিকভাবে এবং মনোযোগসহকারে করতে পারলে উৎপাদন ও সেবার ওপর শতভাগ ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ক্ষেত্রে আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান রাখতে পারবে এবং আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সক্ষম হব।

দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করার জন্য এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং করে যাচ্ছে। আমরা ফলাফলকেন্দ্রিক কারিকুলাম তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোনো একটি বিষয়ে পড়ার পর তার নিজের কী কী শিখন এবং দক্ষতা অর্জিত হলো, তা বুঝতে পারবে। একজন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার আগেই বুঝতে পারবে ওই বিষয়ে ভর্তি হলে তার লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এমনভাবে তৈরি করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজ অনলাইনে করতে পারে। আমরা ই-নথিতে পদার্পণ করেছি। আমরা এমনভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করার চেষ্টা করছি, যেখানে তারা দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম। আমাদের শুধু দেশীয় কর্মসংস্থানের কথা ভাবলেই চলবে না, বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি তৈরি করতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের আমরা একটি পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে চাই, যাতে সে দক্ষ হয়ে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে।

দক্ষতার একটি বড় মাধ্যম হলো যোগাযোগ। বর্তমান যুগে যে যত বেশি যোগাযোগে পারদর্শী, তার সফলতা তত বেশি। যোগাযোগকে দক্ষতার পিলার বলা হয়ে থাকে। আবার যোগাযোগ মানুষকে কোনো একটি কাজ করার ক্ষেত্রে সাহস বাড়িয়ে দেয়। একজন শিক্ষার্থী হয়তো লেখাপড়ায় খুব ভালো, কিন্তু অন্যের সঙ্গে কথা বলা, সম্পর্ক স্থাপন করা কিংবা ভাবের আদান-প্রদান করায় অনেক দুর্বল। তখন ওই শিক্ষার্থী অনেক পিছিয়ে পড়ে। চাকরি পাওয়া এবং কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা তার জন্য একটু কঠিন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করাকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে, যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জন সহজ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যারা অ্যালামনাই হিসেবে গণ্য হয়, তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ থাকা জরুরি। অ্যালামনাইরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখতে পারে। তাদের পরামর্শ ও নিদের্শনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরিতে অবদান রাখতে পারে। এ ছাড়া তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করতে পারে। অনেক অ্যালামনাই দেশের বাইরে রয়েছে। তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি। মোটকথা, অ্যালামনাইদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরিতে আমরা কাজে লাগাতে পারি। এর জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অ্যালামনাই সেল তৈরি করা যেতে পারে। সেলের দায়িত্ব হবে অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং তাদের কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। আমরা যদি সত্যি একটি স্মার্ট বাংলাদেশ চাই, তাহলে সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককে কাজ করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান হতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট জনশক্তি এবং সবার প্রচেষ্টায় স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট মানুষ মানে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা যদি সবাই মিলে চেষ্টা করি, তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত স্মার্ট দেশে রূপ দেওয়া অসম্ভব হবে না।  

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত