বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫ ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫
দাকোপে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪, ১০:৫৭ AM
খুলনার দাকোপে একদিকে ভেজাল বীজ কিনে হাজারো তরমুজ চাষি পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে কৃষকদের সাথে সারের দাম নিয়ে ব্যবসায়িরা করছেন লুকোচুরি খেলা। কৃষকদের অভিযোগ ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন হাট-বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সার বিক্রি করছেন। ফলে কৃষি কাজ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির মোট ১০ জন ও বিএডিসির ৪ জন মূল সারের ডিলার রয়েছে। এছাড়া ৮৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছে। সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭টাকা, এমওপি ২০ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ উপজেলায় মোট চাষ যোগ্য জমি রয়েছে ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর। এপর্যন্ত তরমুজ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বোরো ধান ৩৫০ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ৪৪ ভূট্টা ১৬ হেক্টর, বাঙি ২০ হেক্টও, গম ২ হেক্টর। ফলে এলাকার হাজারো কৃষকের সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকদের এই চাহিদাকে পুজিঁ করে সরকারি ওই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রীতিমত সার বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন ডিলাররা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চালনা, বাজুয়া, পোদ্দারগঞ্জ বাজার, কালিনগর, নলিয়ান বাজারসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলের ছোট বাজারগুলোতেও সরকার নির্ধারিত ওই মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। সরকারী মূল্য তালিকা ঝুঁলানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আর কৃষকরাও বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত দামে সার কিনতে। এদিকে এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ির প্রলভনে ভেজাল বীজ কিনে হাজারো তরমুজ চাষি পড়েছেন মহা বিপাকে। 

চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবনানন্দ মন্ডল, বানিশান্তা এলাকার আবেদ খানসহ আরো অনেকে জানান, সারের দোকানে গেলে প্রথমে বলে সার নেই। সারের সংকট চলছে। পরে প্রতি কেজিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দাম নিয়ে সার দেয়। বিশেষ প্রয়োজনে অনেক বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কৃষকদের সাথে সার ব্যবসায়িরা লুকোচুরি খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তারা অনেকেই মন্তব্য করেন। এছাড়া এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভালো ফলন হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাশর্^বর্তী দেশের স্ব-নামধন্য কম্পানির প্যাকেটজাত ভেজাল বীজ তাদের কাছে বিক্রি করে। অধিকাংশ ঐ বীজে চারা না ফোটায় পূনরায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বীজ কিনতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। ফলে তরমুজ চাষ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং এতে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন বলে জানান। 

উপজেলার লাউডোব এলাকার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা তপক মন্ডল তপু বলেন, বর্তমানে কৃষিতে ফসল উৎপাদন বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। কৃষককে বিভিন্ন ভাবে ঠকানো হচ্ছে যেমন ভেজাল বীজ, ভেজাল কীটনাষক, ভেজাল সারে বাজার সয়লাব। সারের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া, ভ্যাটের নাম করে কৃষকের কাছ থেকে ১৫% অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হচ্ছে। সরকার আগে সারে ভর্তুকি দিতো। বর্তমানে ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় কিছুটা মূল্য বেড়েছে। তারপরও কৃষক পর্যায়ে কোন ভ্যাট দিতে হয়না। সকল প্রকার ভ্যাট, ট্যাক্স সংযুক্ত করে সরকার খুচরা পর্যায়ে একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কোন খুচরা বিক্রতা তা মানছে না। আগে শুনতাম কৃষি অফিসে জনবল ঘাটতি এখন যথেষ্ট জনবল থাকার পরও বাজার মনিটরিং করতে ব্যার্থ হচ্ছে। আসলে গ্যাপটা কোথায় বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, তরমুজ চাষের শুরুতেই ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত ও অতিরিক্ত দামে সার না কিনতে এবং কোন ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা সারের সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দাম নিলে আমাদের জানাতে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সভাও করা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সারের দোকান নিয়মিত মনিটরিং চলছে। সঠিক তথ্য প্রমান পেলে ঐ সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

                                                                                                  
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত