মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধ ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত’ হলেই কেবল তার দায় স্বীকার করে নেবে জামায়াত। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো গোঁজামিল বা মিথ্যা চাপিয়ে দেওয়া হবে, আমি মিথ্যাকে সত্য বলব, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আগে স্পষ্ট হতে হবে, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা’।
জামায়াতের আমির জানান, তারা স্বীকার করেন যে তার দল ‘এক পাকিস্তানের পক্ষে’ ছিল এবং দলের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ‘অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত’ থাকতে পারেন। তবে এর জন্য সাংগঠনিকভাবে জামায়াতকে দায়ী করা যাবে না।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ওই সময়ের আমি সাক্ষী থাকি আর না থাকি, এটা জামায়াতে ইসলামী না। যদি সন্দেহাতীতভাবে এ ধরনের কোনো ভুল বা অপরাধ প্রমাণিত হয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমা চাইব জাতির কাছে। আমার কোনো রিজার্ভেশন নেই এ ব্যাপারে।
‘কিন্তু কোনো গোঁজামিল বা মিথ্যা চাপিয়ে দেওয়া হবে, আমি মিথ্যাকে সত্য বলব, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আগে স্পষ্ট হতে হবে, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা’- যোগ করেন তিনি।
একাত্তরে জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে রাজাকার, আল বদর, আল শামসের মতো সংগঠনগুলো গঠিত হয়েছিল, বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথিতে এর উল্লেখ রয়েছে- এমনটা স্মরণ করিয়ে দিলে জামায়াতের আমির বলেন, একটা কথা আছে, ইতিহাস বিজয়ীদের পক্ষে আর পরাজিতদের বিপক্ষে থাকে। সেখানে সকল দলের মানুষ ছিল। বাংলাদেশে, পূর্ব পাকিস্তানে তখন যারা ছিল, যারা ভালো মনে করেছে, সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এটাকে দলের দায়বদ্ধতা বলা যাবে না, এটা ব্যক্তিদের যার যার দায়বদ্ধতা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ইসলামীর কোনো রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে যদি এরকম (মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী) কোনো দল গঠন হয়ে থাকে, আর সেই রেজ্যুলুশনের ডকুমেন্ট যদি আওয়ামী লীগের কাছে যায়, সেটা অবশ্যই জাতি গ্রহণ করবে, আমিও গ্রহণ করব।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের আমির ছিলেন গোলাম আজম, তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভাষণ দিয়ে বলেছেন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিতে, রাজাকার সম্মেলন বা বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতের কর্মীদের পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নিতে বলেছেন... এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, আমি এটা বলেছি আগেই, তারা এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। আমি তো বলিনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে চলে গিয়েছিলেন। তারা যেহেতু এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, সুতরাং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য যেটা দরকার বলেছেন। তারা তো অস্বীকার করেনি তারা এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, সহিংসতা যদি কেউ করে থাকে, স্বয়ং গোলাম আজম করে থাকলেও তার বিচার হোক। আমার কোনো আপত্তি নেই।
জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪২ বছর পর এসে সবকিছু জামায়াতের ঘাড়ে ফেলে দেওয়া হলো। এটা কতটুকু জাস্টিস? যে ট্রায়ালটা হলো, সেটাও টোটালি ব্লারড। একটা ক্যাঙ্গারু ট্রায়াল। ৪২ বছর পর আমাদের লোকগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হলো, তাদের বিরুদ্ধে তখন (মুক্তিযুদ্ধের পরপর) একটা অভিযোগ দিতে পারল না কেন? কোনো থানায় তাদের বিরুদ্ধে সামান্য একটা অভিযোগের ছোঁয়া থাকল না কেন?