শুধু বাড়িতে নয়, রাস্তায়ও বেড়েছে ডাকাতি। ঢাকাসহ সারাদেশেই হঠাৎ করেই চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল অবস্থা দেশের সাধারণ মানুষের। এসব অপরাধ হচ্ছেও নানা অভিনব পদ্ধতিতে। শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকছে ডাকাত দল।
অনেক এলাকায় পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে বলে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। কেন পুলিশ সাড়া দিচ্ছে না? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মইনুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফোন করার পরও পুলিশ সাড়া দেয়নি এমন সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।
মইনুল হাসান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে টহল বাড়িয়েছি। কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই শৈথিল্য মেনে নেয়া হবে না। ইতিমধ্যে চেকপোস্টও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে দুর্গাপূজায় পুলিশের নিরবচ্ছিন্ন তদারকির কারণে রাজধানীতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যেকটি ঘটনায় তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, আসামিও ধরা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে ঢুকে ৬০ ভরি স্বর্ণ ৭৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি করতে গিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
যৌথবাহিনী সূত্র জানা গেছে, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডির ১৩ নম্বর সড়কের ১৩/এ নম্বর বাড়িতে আসে কিছু যুবক। তারা নিজেদের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এ সময় তারা বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নানকে মারধর করে। আশপাশের বাড়ির লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে ধানমন্ডি থানায় ফোন করে। কিন্তু প্রথমদিকে পুলিশ সাড়া দেয়নি। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে খবর দেয়া হলে সেনাসদস্যরা সেখানে হাজির হন। এ সময় বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়া ১৩ জনকে সেনাসদস্যরা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা একটি গ্রামে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে ঘর তল্লাশি করার নামে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বেলা দেড়টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে চার জন জাকারিয়ার বাড়ির ফটকের কাছে আসেন। অপরিচিত ঐ ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জাকারিয়ার বাড়ির ভেতরে ঢোকেন। তাদের কাছে হাতকড়া ও রিভলভার ছিল। জাকারিয়ার ঘরে মাদক আছে বলে তারা তল্লাশি করতে চান।
এ সময় তারা জাকারিয়ার ও তার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবাইকে বাড়ির ভেতর এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। সেখানে এক জন তাদের পাহারা দিচ্ছিলেন। ২০-২৫ মিনিট পর তারা ঘর থেকে বেরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। জাকারিয়া ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকে আলমারির ড্রয়ার খোলা দেখতে পান। ড্রয়ারের ভেতরে টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই।
গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে মিরপুর ডিওএইচএসে ফরাহ দিবা (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যার পর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মিরপুর ডিওএইচএসের একটি ভবনের তৃতীয় তলার নিজ ফ্ল্যাটে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ঐ নারী। দুপুরের দিকে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঐ সময় বাসায় কেউ ছিল না। পরে পরিবারের সদস্যরা বাসায় এসে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
এর আগে, গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার দোহারে একটি বিয়েবাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি হয়েছে। বাড়ির মালিকের দাবি, প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মোট ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা।