চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না বলেই তার বরাত দিয়ে মন্তব্য ছাপানো হয়েছে বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। রিপোর্টটি পরবর্তীতে ভয়েস অব আমেরিকাসহ আরও অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সিএমপি'র উপ-পুলিশ কমিশনার ( ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মোঃ রইছ উদ্দিন সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে সিএমপি।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় এজাহারনামীয় এক নম্বর আসামি সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের উদ্ভূত পরিস্থিতির উপর বিদেশি সংবাদমাধ্যম রয়টার্সে ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ওয়ান কিলড ইন বাংলাদেশ অ্যাজ হিন্দু প্রোটেস্টার্স ক্লাশ উইথ পুলিশ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট সিএমপির নজরে এসেছে।
রিপোর্টটি পরবর্তী সময়ে ভয়েস অব আমেরিকাসহ আরও অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খানকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ‘এ মুসলিম লইয়ার ডিফেন্ডিং দাস ওয়াজ কিলড অ্যামিড প্রোটেস্টস আউটসাইড দ্য কোর্ট (ইন চিটাগং), বলেন পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলী।’
রয়টার্স বা সংবাদ সংস্থাটির কোনও সাংবাদিক এই বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে কথা বলেননি উল্লেখ করে সিএমপি বলছে, ঘটনার সময়ে তিনি আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন। লিয়াকত নামে চট্টগ্রামে চার জন কন্সটেবল আছেন। তারাও কাউকে কোনও বক্তব্য দেননি।
কারও বক্তব্য না নিয়েই নিজেদের মনগড়া বক্তব্যকে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়া সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থী বলে মনে করে সিএমপি। তারা বলছে, ভবিষ্যতে রয়টার্সসহ সব গণমাধ্যম এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
উল্লেখ্য, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে সাইফুলকে সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদন থেকে সেই অংশটি মুছে ফেলে।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে তার অনুসারীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে আইনজীবি সাইফুল হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে আটক করেছে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।