বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ময়মনসিংহ শহরের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ শহরে থাকেন এবং আবাসিক বেশ সংখ্যক শিক্ষার্থী টিউশন সুবিধার্থে নিয়মিত যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) কর্তৃক ভাড়ায় চালিত বাস নিয়মিত যাতায়াত করে। সম্প্রতি বিআরটিসি কর্তৃক ভাড়ায় চালিত বাসগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে প্রায়শই মাঝরাস্তায় আটকে যাচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি তৈরী করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না।
পরিবহন দপ্তর থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের সুবিধার্থে বিআরটিসি ময়মনসিংহ ডিপো কর্তৃপক্ষের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চুক্তিবদ্ধ। চুক্তিতে প্রতি ট্রিপে একটি সিটের বিপরীতে দুই টাকা প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। সে হিসেবে ৪৫ সিটের বাসে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৬২০০ টাকা প্রদান করতে হয়। যেটা এই রুটের জন্য মোটামুটি ব্যয়বহুল। তাছাড়া চুক্তি মোতাবেক কাঙ্ক্ষিত মানের সেবাও দিচ্ছে না বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইবতেহাজ আহমেদ স্বপ্নীল বলেন, এসব ভাঙ্গাচুড়া বাসের দরকার টা কি? এগুলো কি আসলেই চলাচলের উপযোগী? কতক্ষণ পর পর বন্ধ হয়ে যায়। আর একবার বন্ধ হয়ে গেলে আর স্টার্ট হয় না। আজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে তেল নিতে বাস অফ করা হয়। কিন্তু পরে বাস আর স্টার্ট হয় না। এভাবে ৩০ মিনিটের উপরে বাস মেরামতের বৃথা চেষ্টা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত লোকালে ফিরে আসতে হলো। কারন ততক্ষণে আমার মিড পরিক্ষার সময় শেষ। ভালো বাস দিতে না পারলে এসব অচল বাস দিয়ে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না।
সরজমিনে দেখা যায়, চলাচলরত ৯ টি বাসের ৬ টির অবস্থাই বেহাল দশা। বাসগুলোর কোনটির পাটাতন ভাঙা, জানালা ভাঙা, সিট ভাঙা, ছাদ ফুটাসহ নানাবিধ সমস্যা। সেই সাথে দেখা যায় বৃষ্টি হলেই বাসের ভেতর পানি পড়ে। তাছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটিতে মাঝ রাস্তায় অহরহ বাস নষ্ট হয়ে যায়। এক পার্যায়ে শিক্ষার্থীদের বাস ধাক্কা দিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে হয়। প্রায় সময়ই ময়মনসিংহ শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যান্ত্রিক বিকল হয়ে আটকে তীব্র যানজট তৈরী করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত নাওয়ার জানান, আমাদের মতো যারা ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি, তাদের প্রথম বড় সমস্যা হলো বাসের সিট পাওয়া। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী বাসের সংখ্যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। তাছাড়া অল্প কিছু বাস বাদে অধিকাংশ বাসের অবস্থাই খুব খারাপ। জানলা ভাঙ্গা থাকার কারণে বাসগুলোর ভেতর ছাদ চুঁয়ে অথবা ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢোকে। ফলে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এমনও হয়, বাস চলতে চলতেই মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায়। এসব সমস্যার কারণে শুধু শারীরিক কষ্টই নয়, মানসিক চাপও বাড়ে। পড়াশোনা এবং সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিতিতেও ব্যাঘাত ঘটে।
বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বারবার সতর্ক করার পরেও তারা উদাসীন ভাব দেখাচ্ছে। অন্যান্য রুটে চলা অনুপযোগী বাসগুলো নামমাত্র মেরামত করে এই রুটে পরিচালনা করছে। এই নিয়ে ময়মনসিংহ বাস ডিপোর কর্তৃপক্ষর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে কেউ কল রিসিভ করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আহমেদ শাকিল হাসমী বলেন, “বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তারা সার্ভিস দেয় না এটি নিয়ে আমি নিজেও চিন্তিত। আমাদের অবজারভেশনে ৯ টি গাড়ির মধ্যে ৬ টি গাড়িরই সমস্যা রয়েছে। তারা যদি আমাদের চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস না দেয় তাহলে আমরা যেকোনো মুহুর্তে চুক্তি বাতিল করতে পারবো। তবে চুক্তি বাতিল করলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য আমাদের নতুন কোন পরিবহন যুক্ত করতে হলে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে। কিন্তু অর্থ বছরের শেষ হওয়ায় এখন এটি আমি বাতিল করতে পারছিনা তাই আমাদের আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”