জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ এবার স্থান পেতে যাচ্ছে মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে এই গণআন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরার পরিকল্পনা চলছে।
সূত্র বলছে, বিষয়টি ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। চলতি বছর বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য বইয়ের কিছু অধ্যায়ে প্রাসঙ্গিকভাবে ‘জুলাই আন্দোলন’ এর প্রাথমিক ইতিহাস যুক্ত করা হয়েছে। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়েও তা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমাদের ইতিহাস বইগুলোতে এখন পর্যন্ত মূলত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্তই ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতিহাসের একটি ধারাবাহিকতা রক্ষার নীতিমালাও অনুসরণ করা হয়। তাই যদি এই আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তা অবশ্যই ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান এবং সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের আন্দোলনের ধারাবাহিকতার প্রেক্ষাপটে সংযোজন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। তবে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নতুন প্রজন্মকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সাম্প্রতিক ইতিহাস সংযোজনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম যেন তাদের সমসাময়িক সময়ের বড় ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানে এবং তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত এই অভ্যুত্থানকে অনেকেই নতুন প্রজন্মের ‘প্রতিবাদ রাজনীতির’ এক যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নাগরিক সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা এ আন্দোলন সমগ্র দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, টিএসসি, নীলক্ষেত ও প্রেস ক্লাব এলাকা বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ছাত্ররা ব্যানার, পোস্টার ও স্লোগানের মাধ্যমে দুর্নীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন, শিক্ষা খাতে বৈষম্য এবং নাগরিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
একপর্যায়ে এ আন্দোলন গণজাগরণে রূপ নেয় এবং চলমান সরকারের পতনের দাবিতে লক্ষাধিক মানুষ রাজপথে নেমে আসে। একই বছরের ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এই অভ্যুত্থান চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।