পটুয়াখালীর গলাচিপায় শেষ মুহূর্তে কোরবানির গরুর হাটগুলো জমে উঠেছে, বেড়েছে পশুর আমদানি। তবে বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে হাটে ভিড় কম থাকায় আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি— ফলে অনেক বিক্রেতাকে গরু নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বাড়িতে।
গলাচিপা উপজেলার পুরান লঞ্চঘাট, নলুয়াবাগী, চিকনিকান্দি, পানপট্টি, উলানিয়া ও কাটাখালী হাট ঘুরে দেখা গেছে—স্থানীয় খামারিদের দেশি ও উন্নত জাতের গরুতে ভরপুর হাটগুলো। তবে বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি। ফলে দুশ্চিন্তায় আছে বড় গরুর বিক্রেতারা। আর ভারতীয় গরু এখনো চোখে পড়েনি, যা স্থানীয় পশুপালকদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছে কম দামে গরু ক্রয় করতে।
ঢাকা থেকে আসা শামীম মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, হাটে প্রচুর গরুর আমদানি রয়েছে, তবে দাম ছাড়ছে না বিক্রেতারা। তার মতে, গত বছরের তুলনায় দাম বেশি দরে কিনতে হচ্ছে গরু। বাজেটের চেয়ে অন্তত ৫-১০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে শহরের বাসিন্দারা এখনো পশু রাখার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না— ফলে অনেকে এখনই গরু কিনছেন না, বরং বাজার যাচাইয়ে ব্যস্ত। গলাচিপা হাটে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার গরু ক্রেতারা বলছেন মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত বছরের থেকে গরু প্রতি ১০-২০ হাজার টাকা কম দাম এবার। তবে দিন যতই যাচ্ছে গরুর দাম ও চাহিদা বাড়ছে। ছোট আকারের গরু ৭০ থেকে ৮০ হাজার, মাঝারি আকারের গরু ৯০ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং বড় গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে।
বিক্রেতা কাওসার হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম। ফলে অনেকেই আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করছেন ভালো দামের আশায়। তাদের বিশ্বাস, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই জমে উঠবে বাজার। তার মতে, কয়েক বছর ধরে গো খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। তাই গরু গুলির দাম বেশ বেশি হাঁকতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতারা দাম বলছে না।
হাট ইজারাদাররা জানাচ্ছেন, প্রতিটি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করে তবেই বিক্রির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে বলে দাবি তাদের। হাটে স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সব সময় তদারকি করছে।
গলাচিপা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সজল দাস বলেন, বর্তমানে বিদেশ থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশেই পর্যাপ্ত পশু উৎপাদিত হচ্ছে, যা চাহিদা পূরণে সক্ষম। গলাচিপা উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৯টি পশু হাট রয়েছে। এবার উপজেলায় কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা ২৩ হাজার ২৭০টি প্রস্তুত রয়েছে। আর চাহিদা রয়েছে ২২ হাজার। উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ১ হাজার ২৭০টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে উপজেলার হাটগুলোতে ভেটেরিনারি টিম পরিদর্শন করেছে।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আশাদুর রহমান বলেন, কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ বিক্রেতাদের বিভিন্ন স্থানে যাতে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হতে না হয় এবং জাল টাকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের টহল টিম কাজ করছে।
এদিকে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদার—সব পক্ষেরই বিশ্বাস, শেষ মুহূর্তে জমজমাট হবে গলাচিপার কোরবানির হাট। আপাতত চলছে অপেক্ষা, দাম যাচাই আর দর কষাকষি পালা। এবার উপজেলায় ৯টি কোরবানির হাট বসেছে। এদিকে গরুর হাটের পাশাপাশি ছাগল বেচাকেনা জমে উঠেছে। দেশীয় ও বিদেশি প্রজাতির ছাগল, ভেড়া হাটগুলোতে দেখা গেছে।