বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম ভাইবার ফলাফলে বোর্ড ভিত্তিক ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। পাসের হারে এই তারতম্য মোট ফলকে প্রভাবিত করেছে। গত ৪ জুন প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কয়েকটি বিষয়ের কিছু কিছু বোর্ডে ৩০ জন ভাইবা প্রার্থীর মধ্যে এক, দুই ও তিন জনকে পাস করানো হয়েছে, আবার কিছু বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ জনকেও ফেল করানো হয়েছে। কিছু বোর্ডে ২৯ জনও পাস করেছেন।
বোর্ড ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় গত ৫ মে অনুষ্ঠিত আরবি প্রভাষক (কোড-৪২৯) পদের গ্রুপ-05A সকাল ৯.৩০ এর ভাইবা বোর্ডে ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১জন পাস করেছেন, ২৯ জনই ফেল করেছেন। আবার একই তারিখের গ্রুপ-01B এর সকাল ১১:৩০ এর বোর্ডে ৩০ জন প্রার্থীর ২৬ জন পাস করেছেন, ৪ জন ফেল করেছেন।
গত ৮ মে অনুষ্ঠিত একই পদের গ্রুপ-03B সকাল ৯:৩০ এর ভাইবা বোর্ডের ৩০ জন ভাইবা প্রার্থীর মধ্যে পাশ করেছেন ৫ জন, ২৫ জনই ফেল করেছেন।
অধিক সংখ্যক ফেলের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের পরীক্ষক লালবাগ মাহমুদা খাতুন মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি বদিউল আলম সরকার জানান, আরবি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না এরকম প্রার্থীদের ফেল করানো হয়েছে।
একই বিষয়ের অন্য ভাইবা বোর্ডের কয়েকজন পরীক্ষক প্রতিবেদককে বলেন, প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন, ২৮ জন ফেল করা স্বাভাবিক কোন বিষয় নয়।
ভাইবা বোর্ডে ফেল করা অধিকাংশ প্রার্থীর অভিযোগ ‘বোর্ডে সংশ্লিষ্ট পরিক্ষক তার মতাদর্শের বাইরে কাউকে পাশ করাননি। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও ফেল করানো হয়েছে। এছাড়া স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় কৃতিত্বের সাথে অনার্স-মাস্টার্স ও ফাজিল কামিলে উত্তীর্ণ হয়েও আরবি বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান রাখিনা এটা মিথ্যা অভিযোগ, আমরা ভাইবা বোর্ডে বৈষম্যের শিকার হয়েছি।’
‘কোনো বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে একজন পাস করেছে। আবার কোনো বোর্ডে ৩০ জনের ২৭ জন। এখানে কোনো না কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। আমাদের ফলাফল পুনরায় প্রকাশ করতে হবে। যারা ৩ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইবায় অংশ নিয়েছেন, তাদের মেধা এতটাও কম নয় যে, তারা গণহারে ফেল করবেন।’
আরবি প্রভাষক পদের ভাইবা বোর্ডে ঢাকার কয়েকটি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ভাইভা প্রার্থীদের। অসৌজন্যমূলক আচরণ, যাচ্ছেতাই প্রশ্ন, এখতেলাফি মাসয়ালার বাড়াবাড়ি, সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতাসহ গুরুতর নানা অভিযোগ। ড্রেস-আপ পছন্দ হয়নি, আরবি বলার টোনে আঞ্চলিকতার প্রভাবের কারণেও ফেল করানো হয়েছে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে আরবি প্রভাষক এবং সমাজ বিজ্ঞান প্রভাষকের ভাইভা পরীক্ষায় পাসের হার যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ৫২ দশমিক ১ শতাংশ। যা গত বছরগুলোর তুলনায় পাসের হারে ব্যাপক তারতম্য।
এদিকে, বৈষম্যের অভিযোগ তুলে চূড়ান্ত ফল পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ভাইভা (মৌখিক) থেকে বাদ পড়া চাকরিপ্রত্যাশীরা। দাবি আদায় না হলে আগামী রোববার এনটিআরসিএ ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গত বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এ কর্মসূচি দেন তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হল, এ বছর ভাইভার জন্য গঠিত বিভিন্ন বোর্ডে পাসের হারের তারতম্যের কারণ খুঁজে বের করে এর সমাধান করা। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কম হওয়ার কারণ বের করা ও এর সমাধান করা। সব ভাইভা প্রার্থীকে সনদ দেওয়া। ফলাফল প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অসংগতি হয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করে সমাধান করা। ভাইভা ফলাফল যথাযথভাবে পুনরায় পর্যালোচনা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
ফেল করাদের অভিযোগ, প্রায় ২৩ হাজার ভাইভা বঞ্চিত প্রার্থী বৈষম্য-জুলুমের শিকার। অনেকে সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও ফেল করেছেন।
ভাইবা প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান এবং সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ১৬তম এবং ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় পাশের হার যথাক্রমে ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ। সেখানে ১৮তম নিবন্ধনের ভাইভা পরীক্ষায় পাশের হার ৭২ শতাংশ। গত বছরের ১২ ও ১৩ জুলাই অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন উত্তীর্ণ হন। ভাইভায় অংশ নেন ৮১ হাজর ২০৯ জন। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্যপদ ১ লাখ ১০ হাজারের ওপর। পাশ করেছে ৬০ হাজার।