শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫ ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২
শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৭:০৪ PM
ফারাক্কার কপাট খুলে দেওয়ার পর থেকেই কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে নদীতে পানি বেড়েছে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বুধবার দুপুর ৩টায় এই দুই নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারনা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ধারাবাহিক পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

জেলার দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর এই দুই ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই দুই ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন দুটিতে অবস্থিত প্রায় ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। 

ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চরের গরু-মহিষের বাথান ভেঙে গরু-মহিষ নিয়ে সবাই নিরাপদে চলে যাচ্ছেন। বাড়ীগুলো ভাষছে পানির উপর যে কারনে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের ওপর দিয়ে প্রভাবিত পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদীর নিন্মাঞ্চলও তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দিনমজুর এসব পরিবার। পানি যেন লোকালয়ে প্রবেশ না করে সে জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি এলাকাবাসীর।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা করছি। তাদের প্রয়োজন হলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। পানি আরও বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ভারতে থেকে ফারাক্কা হয়ে পানি পদ্মায় পড়ছে। গত ২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার দুপুর ৩টায় ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপৎসীমা হলো ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সে অনুযায়ী বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার (০ দশমিক ৯০ মিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। 

একই পয়েন্টে গড়াই পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপৎসীমা হলো ১২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। সে অনুযায়ী বিপৎসীমার ১.২ সেন্টিমিটার (১ দশমিক ০১ মিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার এবং গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে যাতে বন্যাকবলিত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এখনও যেসব জমিতে পানি প্রবেশ করেনি সেগুলোও তলিয়ে যেতে পারে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, শুকনো খাবারসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত