মঙ্গলবার ৫ আগস্ট ২০২৫ ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
মঙ্গলবার ৫ আগস্ট ২০২৫
শুভ্রতায় পরিপূর্ণ নিকলী হাওর
ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫০ AM আপডেট: ৩০.০১.২০২২ ৪:১৪ PM

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বিভিন্ন প্রকার জলাধারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এদেশে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলো হাওর। বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট-বড় অসংখ্য হাওর। এগুলোর মধ্যে অন্যতম কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী হাওর।

পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বিশাল জলরাশির নিকলী হাওর অন্যতম। ছোট ছোট গ্রামগুলো যেন পানিতে ভাসমান। পানির মধ্যে একা দাঁড়িয়ে থাকা হিজল গাছ। অর্ধডুবন্ত করচ গাছের সারি। পানিতে সূর্যের আলোর লুকোচুরি খেলা। দূরে মিশে যাওয়া নীল আকাশের শুভ্রতা। দু-ধারে হাওরবেষ্টিত মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-ইটনা সড়কের সৌন্দর্য। সন্ধ্যায় চাঁদনি আলোয় নৌকা ভ্রমণ আর পানির কলকল ধ্বনি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা হাওরের অপূর্ব দৃশ্য যে কোনও মানুষের মন কাড়বে। শহরের ব্যস্ততা কাটিয়ে এক দিনে ঘুরে আসার জন্য কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। ভরা বর্ষায় হাওরের পানি থাকে টইটুম্বুর। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম। অন্য সময় হাওর শুকিয়ে যায়। নৌকায় চলাচল করা যায় না। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ভরা বর্ষায় হাওর ঘুরতে গেলে।

নিকলী ঢাকা থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার দূরত্বে। চাইলে কেউ এক দিনে ঘুরে আসতে পারবেন। হাওরে চলাচল নিরাপদ। নৌকায় প্রায় সব জায়গায় ঘোরা যায়। এখানে হাওরের বিশাল জলরাশির পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের মানুষের জীবন খুব কাছ থেকে দেখা যায়। ঢাকা থেকে কোনও মানুষ এক দিনে নিকলী ঘুরে আসতে খরচ হবে মাত্র ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

যেভাবে যাবেন:
দেশের যে কোনও স্থান থেকে আপনি গাড়ি কিংবা বাস অথবা ট্রেনে নিকলী হাওরে যেতে পারেন। বাসে ঢাকার মহাখালী কিংবা সায়েদাবাদ থেকে ২২০ টাকা নেবে। মহাখালী থেকে জলসিঁড়ি এবং সায়েদাবাদ থেকে আপনি সরাসরি কটিয়াদী বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন। ঢাকা থেকে কটিয়াদী যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। তার পর সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিকলী হাওর যেতে পারবেন। রিজার্ভ করলে ভাড়া নেবে ৩৫০ টাকা। সিঙ্গেল নিলে মাথাপিছু ৮০ টাকা।

ট্রেনে যেতে হলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে (বুধবার বন্ধ) উঠতে হবে। সকাল ৭টায় কমলাপুর থেকে রওনা দিয়ে সরাসরি গচিহাটা রেলস্টেশনে চলে আসবেন। ট্রেনে আসতে খরচ হবে ১২৫ থেকে ২০০ টাকা (শ্রেণিভেদে)। ট্রেনে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ২ ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা। গচিহাটা আসার পর রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে একটি ইজি বাইক কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ভাড়া ৩৫ টাকা কিংবা রিজার্ভ করে ২৫০ টাকা। হাওর পৌঁছাতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। 

এক দিনে ঘুরে চলে যেতে চাইলে সকাল-সকাল রওনা দিতে হবে। তা না হলে হাওর ঘুরে শেষ করতে পারবেন না।

যেখানে খাবেন:
মূলত নিকলীতে ভালো মানের খুব বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে। মোটামুটি মানের তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে। এ ছাড়া নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় কিছু খাবারের হোটেল আছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। খাবারের পছন্দের মধ্যে হাওরের মাছ, ভর্তা রাখা যেতে পারে। জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

নৌকা ভাড়া:
ঘাটে নামলেই সারি সারি নৌকা বাঁধা দেখা যাবে। মাঝিদের সাথে দামাদামি করে নৌকা ভাড়া করতে পারেন। শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া বাকি দিন নৌকার ভাড়া ঘণ্টায় ৭০০-৮০০ টাকা। বেশি ঘুরলে ঘণ্টায় ৫০০-৬০০ টাকা নেবে। ২৫-৩০ জনের বড় নৌকা পুরো দিনের জন্য ভাড়া নিলে ৪৫০০-৫০০০ টাকা রাখবে। শুক্রবার ও শনিবার নৌকার ভাড়া অনেক বেশি। বড় নৌকা ৭০০০ থেকে ৯০০০ টাকা পর্যন্ত।


ছাতির চর
ছাতির চর একটি ইউনিয়ন। সিলেটের রাতারগুলের মতো ছাতির চরে আছে অর্ধডুবন্ত লম্বা লম্বা সবুজ করচ গাছের সারি। পানির মধ্যে প্যাঁচানো শিকড়। সাধারণত সবাই এখানে পানিতে নেমে লাফালাফি-ঝাঁপাঝাঁপি করে। গোসল সেরে ফেলার জন্য এটা ভালো জায়গা। এখানে ভাসার জন্য বড় রাবারের টায়ার ভাড়া নেওয়া যায়। ঘণ্টায় ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। প্লাস্টিকের নৌকা পাওয়া যায়। নৌকা দিয়ে করচ গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘোরা যে কত আনন্দের, তা না গেলে অনুধাবন করা যাবে না। পানির মাঝে ছোট ছোট ভাসমান নৌকায় ঝাল মুড়ি, চা, চিপসসহ খাবারের জিনিসও পাওয়া যায়। ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টায় এখানে ঘোরা শেষ হয়ে যাবে। বেশি সময় নিলে অন্য জায়গাগুলো ঘুরতে সময় পাওয়া যাবে না।

মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-ইটনা সড়ক
দু-পাশে হাওরের পানি মাঝে সরু রাস্তা। রাস্তার মাঝে মাঝে ছোট বড় অনেকগুলো সেতু। সেতুতে দাঁড়িয়ে হাওরের দৃশ্য, জেলের মাছ ধরা, বাতাস মুহূর্তের মধ্যেই যে কারও মন ভালো করে দেবে। এই সড়কে বাইক চালাতে পারলে আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। এ ছাড়া যাতায়াতের জন্য আছে ইজিবাইক। ভাড়া জনপ্রতি আসা যাওয়া ১৬০-১৮০ টাকা। ইজিবাইকে অষ্টগ্রাম ঘুরে দেখতে পারবেন। যাওয়া যাবে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ি।

অষ্টগ্রামের কুতুব শাহী মসজিদ
অষ্টগ্রাম ঘোরার সময় বাংলার সুলতানি ও মোগল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে নির্মিত কুতুব শাহী মসজিদ দেখে আসতে পারেন। পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদ। বিখ্যাত দরবেশ কুতুব শাহের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদের পাশেই দরবেশের কবর অবস্থিত।

হাওরের অথৈ পানি। সাঁতার জানা না থাকলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখবেন। নৌকায় ওঠার পূর্বেই ঘাট থেকে ভাড়া নিতে হবে। প্রতিটি লাইফ জ্যাকেট পঞ্চাশ টাকা নেবে। যাওয়ার সময় আবার ফেরত দিতে হবে। রাতে হাওরে থাকতে চাইলে অবশ্যই নিকলী থানায় জানাতে হবে। রাতে নৌকা বেড়িবাঁধের কাছাকাছি রাখবেন। আবহাওয়া ভালো না থাকলে রাতে না থাকাই ভালো। নৌকায় ওঠার পূর্বে সাথে খাবার পানি নেবেন।

হাওর থেকে কখন ফিরবেন?
অষ্টগ্রাম-মিঠামইন ঘুরে আপনাকে সন্ধ্যার পূর্বেই নৌকায় উঠতে হবে। নৌকায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় ঘাটে পৌঁছে যাবেন। সন্ধ্যার পর আকাশে চাঁদনি আলো, চারদিকে নীরবতা আর পানির কলকল ধ্বনি আপনাকে কোথাও হারিয়ে নিয়ে যাবে। এই দৃশ্য রেখে কেউ ফিরতে চাইবে না। কিন্তু রাতে থাকতে না চাইলে আপনাকে অবশ্যই ৮টা থেকে সাড়ে ৮টায় ঘাটে পোঁছাতে হবে। তাহলে ঘাট থেকে পুনরায় ঢাকায় পৌঁছাতে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত