বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
গণভোটই রুশ-ইউক্রেন সংকটের সমাধান
রেজাউল করিম
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:০৯ PM
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ দশ মাস অতিক্রম করে এগারো মাসে পদার্পণ করেছে। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধ ইউক্রেনের হাতে নেই। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আমেরিকার হাতের পুতুল। আমেরিকা ইউক্রেনকে যুদ্ধের অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য সবকিছু দিয়ে সাহায্য করছে। আমেরিকা এক বিরাট সুযোগ পেয়েছে যা রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাাদিমির পুতিন আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছেন। এ যুদ্ধে ইউক্রেন, রাশিয়া এমনকি ইউরোপ ধ্বংস হলে আমেরিকার কী আসে যায়? এ কথা জেনেও ইউরোপ ও ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে বা তাকে খুশি রাখতে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এ যুদ্ধকে গিলতে পারছেন না, আবার ওগরাতেও পারছেন না। ইউক্রেন পশ্চিমাদের সহযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বটে, কিন্তু ধ্বংস ও দুর্গতি তাদের পিছু ছাড়ছে না। এ শীতে ইউক্রেনের অধিকাংশ  এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। কেননা রাশিয়ার মিসাইলে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।

রাজনৈতিক মানচিত্রে এ যুদ্ধ রাশিয়া-ইউক্রেনে সীমাবদ্ধ থাকলেও অর্থনৈতিক মানচিত্রে তা সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়াও কিছু পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কেননা রাশিয়া তেল, গ্যাস, খাদ্য, সার উৎপানের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতিও চাপে পড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আরো চাপে আছে। করোনার ন্যায় মহামারির ধকল থেকে বিশ্ব ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই শুরু হয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের সমাপ্তি একান্ত দরকার।

কিন্তু কীভাবে? রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিরতি দিয়ে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশ দখল করেছে সে অঞ্চলে জাতিসংঘের অধীনে গণভোট করা যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে সে অঞ্চলের অধিবাসী কোন দেশের সাথে থাকতে চায়? যদিও রাশিয়া ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিন ব্যাপী গণভোটের আয়োজন করে। তাতে সে অঞ্চলের অধিকাংশ নাগরিক রাশিয়ার সঙ্গে থাকতে চায়। পশ্চিমারা সে গণভোট ফেয়ার মনে করে না। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে একটা সুষ্ঠু-সুন্দর গ্রহণযোগ্য গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। সে গণভোটের ফলাফল দুইপক্ষ মেনে নিলেই সমাধান হয়ে যায়। গণভোটই সমাধানের একমাত্র উপায়। এতে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের মুখ রক্ষা পাবে। ঐ সব অঞ্চলের মানুষ যদি ইউক্রেনের পক্ষে থাকার মত দেয়, তবে রাশিয়া বলতে পারবে যে, তারা রুশ ভাষাভাষী অঞ্চল তো দখল করেছিল। ঐ অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার সাথে থাকতে না চাইলে কী করার আছে? আর যদি ঐ অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার সাথে থাকতে চায়, তবে ইউক্রেন বলতে পারবে যে, তারা মরণপণ করে যুদ্ধ করেছে। ঐ অঞ্চলের মানুষ ইউক্রেনের সাথে থাকতে না চাইলে কী আর করার আছে? ন্যাটোও বলতে পারবে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। তারা তো গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা। তারা তো ঐ অঞ্চলে গণভোটের প্রস্তাব দিতে পারে।

আমি অনেক দিন ধরে ভাবছি যে, ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটের সমাধান গণভোট। জগলুল হাবিব নামে এক বড় ভাই জার্মানিতে থাকেন। তিনি খুব পুতিন বিরোধী। তার সাথে ফোনে কথা হলে আমি গণভোটের কথা বলতাম। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এ রকম একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টা জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখা উচিত। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রের কোনো এলাকা দখল করলে তার বৈধতার দিতে কি গণভোট দিতে হবে? বিষয়টা এখানে সরলীকরণ করলে চলবে না। ইউক্রেন রাষ্ট্রটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। ১৯৯১ সালে ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পৃথক হয়। ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের মানুষ রুশভাষী ও রুশ সংস্কৃতিধারী। তারা ইউক্রেনে হয়ে পড়ে সংখ্যালঘু এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তারা ইউক্রেনে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে থাকে। ২০১৫ সালে ইউক্রেন দোনবাসে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার অঙ্গীকার করেও দেয়নি। মানুষের স্বভাব হলো, একদিকে সে নিজে স্বাধীনতা চায়, অন্যদিকে সে অপরকে পরাধীন করে রাখতে চায়। পরের উপর মাতুব্বরি করাকে স্বাধীনতা মনে করে। যেটা ব্রিটিশ শত শত বছর করেছে। এখন আমেরিকার করছে। আর ক্রিমিয়া কখনো ইউক্রেনের অংশ ছিল না। ১৯৫৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ক্রুচেভ শাসনকার্যের সুবিধার্থে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের নিকট হস্তান্তর করেন। 

আমেরিকা রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সমাধান চায় না। আমেরিকা চায় রাশিয়াকে পরাজিত করতে, বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, এক ঘরে করতে, খণ্ড-বিখণ্ড করতে। আমেরিকা রাশিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চায় যাতে সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। আমেরিকা পৃথিবীতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চায় না। আমেরিকা ও তার মিত্ররা রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে চায়। এজন্য তারা বিভিন্ন দেশে ও সংস্থায় রক্ষিত রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করছে। যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার জন্য পশ্চিমারা ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আধুনিক সমরাস্ত্র ও নগদ টাকা দিচ্ছে। রাশিয়াকে বেশি শাস্তি দিতে চাইলে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যুদ্ধ মানে ধ্বংস। যুদ্ধে কাউকে পরাজিত করতে গেলে নিজের পরাজয়ও কম হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারকে পরাজিত করতে গিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মাতুব্বরি শেষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছিল বিশ্বের মোড়ল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার পরাজিত হলো। কিন্তু ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরিবর্তে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের নতুন মোড়ল হয়। ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে যদি আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে পশ্চিমাদের মোড়লগিরি শেষ। তখন চীন একক বিশ্বশক্তি, একক বিশ্ব মোড়ল হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক : লালন গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত