সাদাত হোসাইন কোন ভাবনা থেকে লিখেছেন, ‘শোনো, কাজল চোখের মেয়ে.. আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে... তোমার চোখে চেয়ে....’। সময়ের হার্টথ্রব হয়ে ওঠা নাজিফা তুষি এমন চোখেই ধরা দিয়েছেন পর্দায়।
প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যে কারোই প্রশ্ন জাগবে নাজিফা তুষি কল্পনা না বাস্তবে, মানুষ না দেবী? চরিত্রের বিন্যাসে তার কাজল চোখ, ফিটনেস, বডি ল্যাংগুয়েজ, ড্রেস সেন্স আর মিক্সার কেমিস্ট্রি আলোচনা তুলেছে তাঁকে নিয়ে। তবে নাজিফা তুষির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেরা চরিত্র মনে হলে অত বেশি বলা যাবে না। কারণ কেবল মাত্র জার্নিটা শুরু হলো।
গুলতি চরিত্রটি করতে আমাকে বহু ত্যাগ আর সাধনা করতে হয়েছে। কাজটি খুব কঠিন ছিল।’ ছবিটির বর্তমান হল অবস্থান কেমন জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাই বলুন’। আপনি হলে হলে প্রমোশনে ছিলেন প্রশ্নে নাজিফা তুষি বলেন, হ্যাঁ এখনও ছবিটির চাহিদা তুঙ্গে। ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।নতুন কোন কাজ প্রশ্নে তিনি বলেন- এখনিই সেটা বলা যাবে না।
আসলেই গুলতি চরিত্রে রহস্যময় হাসিতে মায়ার চোখে দর্শকের চোখ বন্দি করে নিয়েছেন তিনি। প্রতি মুহুর্তে সুইং অভিনয়, দেহের বাঁক সৃষ্টি বেশ উপভোগ্য পরিবেশ পর্দা জুড়ে। ‘আইসক্রিম’ থেকে ‘সিন্ডিকেট’র জিশা চরিত্র নাফিজা তুষির ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে তাঁকে উচ্চকিত অবস্থানে নিয়ে মুহুর্তের অপ্সরা বানিয়েছে ‘হাওয়া’র গুলতি চরিত্র। পোস্টারে দেখা তাঁর রহস্যময় এক্সপ্রেশন ফুটিয়ে তোলা খুব সহজ কথা নয়। এছাড়া ’হাওয়া’’ ছবিতে নাজিফা তুষি ভীষণ রহস্যময় চরিত্র করেছেন। যেমন- শিহরণ জাগানো দৃশ্যে নাজিফা তুষি হঠাৎ উদয় হয় মাঝিদের ট্রলারে। সে নিজে এসেছে না তাকে শিকারী হিসেবে কেউ ব্যবহার করেছেন। এমন প্রশ্নের রেশ মাথায় রয়ে যায়। দর্শকরাও বলছেন, ‘ছবিটা নিয়ে যত ভাবছি, তত ছবিটার প্রতি মুগ্ধতা বাড়ছে। বিশেষ করে, সবচেয়ে মুগ্ধতা তৈরি হয়েছে নাজিফা তুষির করা গুলতি চরিত্রকে ঘিরে। একজন অভিনেত্রী যে চরিত্রের নাগাল পেতে সাধনা করতে হয় নাজিফা তুষি নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের সেই সেরা চরিত্রটি পেয়ে গেছেন।’
গুলতি লিড রোলে একজন বেদেনী। বেদেনীদের অপূর্ব সাজগোজের বাস্তব উপস্থিতি ছিল গুলতির মধ্যে? নাকে মিনা, কানে হরেক রকম দুল, সুন্দর করে চুলের খোঁপা বাঁধা, খোঁপায় কাঁটা, পরিচ্ছন্ন সাজের সঙ্গে পরিস্কার সুতির শাড়ি, ভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজ, পেটিকোটের নিচে আঁকাবাঁকা বাঁক-সবকিছু মিলে এক অন্য রকম সৌন্দর্য ছিল তাঁর।
এখানে নাজিফা তুষি নিজেকে ভেঙে চরিত্রের প্রয়োজনে নিবিড়ভাবে গড়ে তুলেছেন না হয় এত অদ্ভুত আর ধারালো এক্সপ্রেশন বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে গুলতি চরিত্র আকঁতে পারা দুঃসাধ্য ছিল।
যদিও ‘হাওয়া’ সিনেমাটি ‘সাদা-সাদা, কালা-কালা’ শিরোনামে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে তবে সিনেমাটি না দেখলে বোঝা যেত না কেবল একটি গানেই কোনো সিনেমা সমৃদ্ধ হয় না। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন নিজের নির্মিত প্রথম সিনেমায় একজন বাউল শিল্পীর সঙ্গে জুটি বেঁধে একটা অনবদ্য গান উপাহার দিলেন এটা আসলেই প্রশংসার দাবিদার।
‘ও তিরিশ টাকা কেজি মাছ বাবু পেয়ে খাবে লো... জল দিয়ে বেশি করিস না.... আটটা বাজে দেরি করিস না।’
গানটির কথাগুলোর দিকে একটু সূক্ষ্মভাবে নজর দিলে বোঝা যায়। পুরোটা গান মৎস্যজীবিদের পেশার সঙ্গে যুক্ত তাদের উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে। সিনেমার প্রেক্ষাপট একদল জেলের মাছ ধরে জীবনযাপন করার। সে সূত্রে এই গানটা যেন একদম গল্পের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। সিনেমাটি ভবিষ্যতে কোন বিশেষণে থাকবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।
-বাবু/শোভা