রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ ১ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ১৫ জুন ২০২৫
গোপনকক্ষের শঙ্কা দূর করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৪:৫৬ PM
আগে শোনা গেছে ব্যালট পেপারে যে কেউ সিল মেরে বক্স বোঝাই করতে পারে। কিন্তু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সেই সুযোগটি নেই। কারণ, যতক্ষণ ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিলছে ততক্ষণ তার জন্য ব্যালট তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু এখন সমস্যাটা হচ্ছে, গোপনকক্ষে আমার জায়গায় অন্য কেউ বাটন চাপছে কি না। এই নিরাপত্তার জায়গাটা আমাদের তৈরি করতে হবে। মানুষের মনের শঙ্কাটা দূর করতে হবে।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম আয়োজিত ‘কূটনৈতিকদের দৃষ্টিতে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন ও ইভিএম ব্যবহার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.)  বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি সরকারের দলের প্রচারণার জন্য নানা ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে প্রচারণার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইভিএম সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য সেরকম নানা প্রচার-প্রচারণা দরকার। এতে করে বিভ্রান্তির যে জায়গাটি আছে, সেটি দূর হবে। তিনি আরও বলেন, আমি অনেক জায়গায় শুনেছি ব্যালট পেপারের ব্যালটে যে কেউ সিল মারতে পারে। কিন্তু ইভিএমে সেই সুযোগটি নেই। ইভিএমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলা পর্যন্ত ব্যালট তৈরি হবে না। আমার মনে হয়, এটি অনেক বড় একটি জায়গা যেখানে ফলস ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন যে জায়গাটি সামনে আসছে, সেটা হচ্ছে গোপনকক্ষে আমার জায়গায় অন্য কেউ বাটন টিপছে কি না। এই নিরাপত্তার জায়গাটা আমাদের তৈরি করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে এরকম কোনো সুযোগ নেই। মানুষের এই শঙ্কার জায়গাটা দূর করতে হবে।

বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সুযোগ একই রকম না হলে ভোট কাস্ট কমে যাবে, যা বিতর্ক সৃষ্টি করবে। ইভিএমেও ভোট কাস্ট কমবে এদিক বিবেচনায় নিতে হবে। ১৯৯৬ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সময় দলীয় সরকারের অধীনের তুলনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে মুক্তি দিতে হলে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আর এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং আন্তরিক হতে হবে। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলো ফানার্ডো জিয়াস ফেরেস নিজ দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ইভিএমে ভোট কারচুপি ও সহিংসতা কমেছে। আগে ব্যালট ছিনতাই হতো। কেন্দ্র দখল করার জন্য রক্তপাত হতো। যা বিগত ২০ বছর ধরে বন্ধ হয়েছে ইভিএমের ব্যবহারের কারণে। তবে ইভিএমে ভোট প্রয়োগের শেষ ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সব উদ্যোগ বিফলে যাবে।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মো. আবেদ আলী বলেন, নির্বাচন কমিশনার ঢাকায় বসে সিসিটিভির মাধ্যমে গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। শুরুতে দুটি, চারটি, পাঁচটি কেন্দ্রের গোপনকক্ষে কাউকে দেখা গেছে, এটা দেখেছেন। ধীরে ধীরে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাহলে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন এমন একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। কিন্তু এ ঘটনায় ইভিএমের কোনো দুর্বলতা ছিল না। অন্যকিছু হতে পারে। আগে ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটত। এখন কিন্তু সেই ঘটনা আর নেই। আমরা চাই, আগামী নির্বাচন সুন্দর একটি নির্বাচন হোক।

মতবিনিময় সভায় সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, ইভিএম সুন্দর ও নির্ভুল পদ্ধতি, একইসঙ্গে ব্যয়বহুলও। কিন্তু এটা আমাদের বাংলাদেশের নির্বাচনে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারব, সেটা সম্ভব না। ইলেকশন কমিশনকে যদি সহযোগিতা করতে পারি, প্রশাসন যদি সহযোগিতা করে তবে ব্যালটের মাধ্যমেও সুন্দর নির্বাচন হয়, এটাও তো আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আজ নির্বাচন কমিশন কিছু ইভিএম এবং কিছু ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানাব ইলেকশন কমিশনের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য। যাতে করে সামনের জাতীয় নির্বাচন সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহমেদ আবুল কালাম আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর নূর দুলাল, ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান প্রমুখ।

বাবু/এসআর
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত