অবশেষে দুই নদীর নামেই হচ্ছে নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ। এর মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা’ বিভাগ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে হবে ‘মেঘনা’ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, আগামী রোববার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস–সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভা রয়েছে। এই সভার আলোচ্যসূচিতে নতুন দুটি বিভাগ অনুমোদনের প্রস্তাব ওঠার কথা রয়েছে। একই দিনে সচিব সভাও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, থানা গঠন বা স্থাপনের প্রস্তাব সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) অনুমোদিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে (আহ্বায়ক) নিকারের সদস্য হিসেবে থাকেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিব। বর্তমানে দেশে আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
আটটির বাইরে নতুন করে ‘পদ্মা’ নামে বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো নিয়ে একটি এবং ‘মেঘনা’ নামে বৃহত্তর কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে আরেকটি নতুন বিভাগ হবে এমন ঘোষণা আগেই দিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত এই দুই বিভাগ নিয়ে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দুইটা বিভাগ বানাব, আমার দুইটা নদীর নামে। একটা পদ্মা, একটা মেঘনা। এই দুই নামে দুইটা বিভাগ করতে চাই।’
এখন নতুন বিভাগ করার জন্য আনুষ্ঠানিক যে প্রক্রিয়া, সেটি হতে যাচ্ছে। এটি হলে দেশে প্রশাসনিক বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি।
নদীর নামে বিভাগের নেপথ্যে:
কুমিল্লা ও ফরিদপুরের স্থানীয় রাজনীতিকরা তাঁদের শহরের নামেই বিভাগ চেয়েছিলেন। নিজেদের শহরের নামে বিভাগ পেতে নোয়াখালীর বাসিন্দারাও ব্যাপক চেষ্টা-তদবির করেছেন। বিশেষ করে কুমিল্লার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়েছিল।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে নদীর নামে বিভাগের নামকরণ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। স্থানীয় নেতারা একাধিকবার কুমিল্লা নামে বিভাগ দাবি করলেও সরকারপ্রধান সেটা নাকচ করে দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কুমিল্লার নামের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের নাম জড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, বিভাগের ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দুটি বিভাগ বানাব আমাদের দুটি নদীর নামে। একটি পদ্মা, একটি মেঘনা। ওই সময় যুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ফরিদপুর বিভাগ করব; কিন্তু 'ফরিদপুর' নাম দিচ্ছি না, সেটার নাম হবে পদ্মা। কারণ, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। নাম ভিন্ন হলেও মেঘনা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে কুমিল্লা ও পদ্মা বিভাগের প্রশাসনিক সদরদপ্তর হবে ফরিদপুর।
ছয়টি উপজেলা, থানা ও পৌরসভা: নিকার বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে 'ঝাউদিয়া থানা' নামকরণ করতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই সঙ্গে 'ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প'কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে 'ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প' নামকরণের প্রস্তাব এসেছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দুটি পৌরসভা ও একটি উপজেলার বিষয়ে পৃথক তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় পৌরসভা গঠন এবং ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের প্রস্তাব রয়েছে। এ বিভাগ থেকে তৃতীয় প্রস্তাটি হচ্ছে- বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ও বোয়াইল ইউনিয়নের বিরোধপূর্ণ অংশ বিয়োজন করে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সংযোজন করে মাদারগঞ্জ উপজেলার সীমানা পুনর্গঠন।
সচিব সভার আলোচ্যসূচিতে ১০ বিষয়:
এদিকে রোববার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভা অনুষ্ঠানের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। সভার আলোচ্যসূচিতে ১০টি বিষয় উল্লেখ করে সব সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আলোচ্যসূচিতে থাকা বিষয়গুলো হচ্ছে- খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ এবং পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা, সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, সুশাসন ও শুদ্ধাচার বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারণ। এর বাইরে বিবিধ প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনার বিষয়টিও আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা শুরু হওয়ার পর সচিবালয়ের কোনো বৈঠকে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে সচিবালয়ে যাননি। এ হিসেবে প্রায় তিন বছর পর সচিবালয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান।
-বাবু/এ.এস