শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে পাকিস্তানের জনগণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:২৫ PM
বিতর্কিতভাবে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতীক সম্ভবত ‘মালাক্কা কেইন’ (লাঠি)। গত ২৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জেনারেল অসিম মুনিরের হাতে ব্যাটন তুলে দিয়েছেন জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। এর ফলে ছয় বছর পর নতুন সেনাপ্রধান পেলো পাকিস্তান।

জেনারেল মুনির আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র প্রধান ছিলেন। এখন দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের এবং পাকিস্তানি গণতন্ত্রের স্ব-নিযুক্ত পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন।

পাকিস্তানে সেনাপ্রধানদের নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রায়ই দেখা যায়, নিয়োগদাতাকে পদচ্যুত করে অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেন সেনাপ্রধানরা। এ যাবৎ পাকিস্তানের ২২জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কেউই মেয়াদ পূরণ করতে না পারার প্রধান কারণ এটাই এবং তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও ভালো করেই বোঝেন।

শাহবাজের বড় ভাই নওয়াজ শরিফ তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালে পারভেজ মোশাররফকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন নওয়াজ। কিন্তু পরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন মোশাররফ। এরপর ২০১৬ সালে জেনারেল বাজওয়াকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেন নওয়াজ। এবার অভিযোগ, বাজওয়ার নির্দেশেই পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে ক্ষমতাচ্যুত ও রাজনীতি থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে।

জেনারেল মুনিরের কাছ থেকে শাহবাজ শরিফ যদি ভালো কিছু পান, তবে তা হতে পূর্বসূরী ইমরান খানের কারণে। বলা হয়, ইমরানকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিলেন জেনারেল বাজওয়া। কিন্তু সেনাবাহিনীর এ প্রিয়পাত্রই গত এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন, যেখানে হাত ছিল সেনাপ্রধানেরই।

ক্যারিশম্যাটিক নেতা ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, জেনারেল বাজওয়া আমেরিকার সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। এই অভিযোগ তার দলকে উপ-নির্বাচনে জিততে সাহায্য করার পর তিনি আরও এগিয়েছেন। ইমরান খানের দাবি, এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গত মাসের ওই হামলায় আহত হন পিটিআই প্রধান।

জেনারেল বাজওয়া আইএসআই প্রধানসহ অন্যান্য বড় কর্মকর্তাদের ইমরান খানের নিন্দা করার জন্য প্ররোচিত করেন। তবে এতে যদি কিছু হয়, তা হলো ইমরানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। পাকিস্তানের জেনারেলদের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান গ্যারিসন রাওয়ালপিন্ডিতে। গত সপ্তাহে সেখানে এক সমাবেশে ইমরানের ভাষণ শুনতে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। সেদিন ইমরান খান কড়া ভাষায় বলেছিলেন, আমি আমার জীবনের চেয়ে পাকিস্তানের স্বাধীনতা নিয়ে বেশি চিন্তিত।

জেনারেল মুনির নিশ্চয়ই উদ্বিগ্ন। তবু ইমরান খানকে ব্যর্থ করার জন্য তার সর্বোত্তম আশা হলো, জেনারেল বাজওয়ার নির্দেশ- শক্ত হয়ে বসে থাকুন। পিটিআই প্রধান আগাম নির্বাচন চান এবং এর জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন পাঞ্জাব ও খাইবার-পাখতুনখাওয়ার বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আর শাহবাজ আগামী আগস্টে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। সেনাপ্রধানেরও উচিত সেই সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা।

তবে জেনারেল মুনিরের নিজেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পাকিস্তানি তালেবান যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে। আফগান তালেবানদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো নয়। এছাড়া মহামারির ধাক্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বন্যায় জর্জরিত অর্থনীতি বাড়তি কোনও চাপ নিতে পারবে না।

পাকিস্তানে বর্তমানে মাত্র এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাদের বন্ড মার্কেটে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। অতীতের সেনাপ্রধানরা হয়তো ভেবেছিলেন, এ ধরনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জেনারেল মুনির এ ধরনের ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে আলাদা দেখাতে পারেন।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

বাবু/এসআর
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত