আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, তার একটি অংশ, অর্থাৎ ১৪০ কোটি ডলার দিচ্ছে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফান্ড বা আরএসএফের আওতায়। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসবে এ ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। কথা হচ্ছে, এই নবগঠিত আরএসএফ তহবিল কি?
বাংলাদেশ–বিষয়ক প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, এই আরএসফ ইসিএফ বা বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও ইএফএফ বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এই তহবিলের অর্থ দিয়ে তার সহায়তা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত সরকারি ও বেসরকারি তহবিল জোগাড়ে সহায়তা করাও এর উদ্দেশ্য।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা একেবারেই নগণ্য হলেও এর কারণে যেসব দেশ ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে সবার আগে। এ–বিষয়ক বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থার সূচকে বাংলাদেশ সামনের কাতারেই আছে।
আইএমএফ বাংলাদেশ–বিষয়ক প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিসংক্রান্ত একটি তালিকা দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এ ছাড়া জাতিসংঘের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী যে কার্বন নিঃসরণ, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই নিচের সারিতে।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মৌসুমি দারিদ্র্য বেড়ে যায়। ঝড়, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস—এগুলোর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয় এ দেশের মানুষকে। প্রতিবছর সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাজেটের একটি অংশ ব্যয় করতে হয়।
বিশ্বব্যাংককে উদ্ধৃত করে আইএমএফ বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে কেবল সাইক্লোনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির ১ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ এখন প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জিডিপির ১ শতাংশের কম ব্যয় করছে। কিন্তু আইএমএফ বলছে, আগামী ১৫ বছরে সরকারকে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৩ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
আইএমএফ মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করা গেলে দেশের আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়বে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দিকনির্দেশনা তৈরি করবে, যার আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির বিবৃতি দেবে।
বাবু/এ আর