সাফল্যের স্বীকৃতি কিংবা কর্মদক্ষতার উজ্জ্বল নিদর্শনের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত পদক বা সম্মাননা ও পুরস্কার বুঝায়।
আবহমান কাল থেকে কাজের স্বীকৃতি বা কৃতিত্বের অবদান হিসেবে পুরস্কার প্রদান করার গুরুত্ব সামান্যও কমেনি। একদিকে যেমন পুরস্কার কৃতি কাজের স্বীকৃতির চিহ্ন, অন্য দিকে পুরস্কার প্রাপ্তি সবাইকে অনুপ্রেরণা প্রদান করে। আজকের হরেক রকম আয়োজনে থাকছে বিশ্বের তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি প্রদানকারী পুরস্কার সম্পর্কে। বিস্তারিত তুলে ধরেছেন : এম আর লিটন
নোবেল
বিশ্বের জনপ্রিয় পদকের নাম নোবেল পুরস্কার । ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয়। ঐ বৎসর থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হল: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি। নির্বাচিতদের প্রত্যেক বছর পুরস্কার হিসেবে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন ৮০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় সাত কোটি টাকা) দেয়া হয়। মৃত কাউকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় না। তবে খুব ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে মরণোত্তর পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল পুরস্কারকে এ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। আলফ্রেড নোবেল সুইডেনের স্টকহোমে ১৮৩৩ সালে জন্ম নেন। নোবেল তার মোট সম্পদের ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনারের (প্রায় দুই কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার টকার সম পরিমাণ) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করে যান।
‘কিং ফয়সাল
বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার (পূর্বে বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার নামে পরিচিত ছিল) হল কিং ফয়সাল ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদত্ত একটি বাৎসরিক পুরস্কার যা একটি ইতিবাচক পার্থক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখা একনিষ্ঠ নারী ও পুরুষদের প্রদান করা হয়। ১৯৭৭ সালে এটি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ইসলাম পরিষেবায়, ইসলামী অধ্যয়ন, আরবি ভাষা, সাহিত্য, চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের সেবায় অসামান্য অবদানের সম্মানে নির্বাচিত হওয়ার পর এটি বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। শুরুতে এটি তিনটি ক্ষেত্র জুড়ে ছিলঃ ইসলাম পরিষেবায়, ইসলামিক অধ্যয়ন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য পরিবেশন; প্রথম পুরস্কারটি ১৯৭৯ সালের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ১৩৯৯ হিজরীতে মঞ্জুর করা হয়, পরে এতে আরও দুটি ক্ষেত্র যুক্ত করা হয়, যথা চিকিৎসা এবং বিজ্ঞান। প্রথম সংস্করণে পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে ইসলামি পরিসেবার ক্ষেত্রে প্রথম ছিলেন সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী এবং ইসলাম অধ্যয়নে ফুয়াত সেজগিন, যাদের ১৯৭৯ সালে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
টুরিং
টুরিং পুরস্কার (ঞঁৎরহম অধিৎফ) কম্পিউটার বিজ্ঞানে অবদানের জন্য প্রদান করা একটি সম্মাননা। অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি বা এসিএম প্রতি বছর এই পুরস্কারটি প্রদান করে থাকে। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত এবং এটিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার বলা হয়ে থাকে। কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ অ্যালান টুরিং-এর নামানুসারে এই পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে।
বুকার
ম্যান বুকার পুরস্কার বা সংক্ষেপে বুকার পুরস্কার বিশ্ব সাহিত্যের মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। ১৯৬৪ সাল থেকে বিশ্বের সৃষ্টিশীল লোকদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতি বছর জুরিদের মতে বিগত এক বছরে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাসকে এই পুরস্কারটি দেওয়া হয়। তবে এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। পুরস্কারের মনোনীত উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় লেখা হতে হবে আর লেখককে অবশ্যই কমনওয়েলথ, জিম্বাবুয়ে অথবা আয়ারল্যান্ডের নাগরিক হতে হবে। তবে ২০০৫ সাল থেকে বিশ্বের যে কোন দেশের লেখকদের জন্যে আগের বুকার পুরস্কারের ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার হিসেবে বুকার দেওয়া হচ্ছে।
অস্কার
অস্কার হলো একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস থেকে ১৯২৯ সাল থেকে দেয়া একটি বার্ষিক পুরস্কার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত অভিনেতা, পরিচালকদের স্বপ্নের পুরস্কার এই একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কারটি সব চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে বিখ্যাত হিসাবে গণ্য করা হয়। যেখানে রূপালি জগতের পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্য প্রভৃতি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। সারা বিশ্বে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করে থাকেন। একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান হয়। অনুষ্ঠানটি ২০০১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত হলিউডের কোডাক থিয়েটারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৩ থেকে থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের নকিয়া থিয়েটারে অস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গোল্ডেন গ্লোব
হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন ১৯৪৩ সাল থেকে প্রতি বছর আমেরিকায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোগ্রামের জন্য গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশনটি মূলত হলিউডের জন্য ফান্ড সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করে। আমেরিকায় একাডেমি পুরস্কার ও গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের পরই সবচেয়ে বেশি লোক গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান দেখে। অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টস পাঁচবার মনোনীত হয়ে তিনবার এ পুরস্কার জেতেন। অন্যদিকে অভিনেতা টম হ্যাংকস ছয়বার মনোনীত হয়ে চারবার জেতেন এ পুরস্কার।
বাফটা
বাফটা ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) নামে পরিচিত একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা হলো এটি। ১৯৪৭ সাল থেকে এরা এই পুরস্কার দেয়া শুরু হয়েছে। মূলত প্রতি বছর চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, টেলিভিশন শিল্প, ভিডিও গেমস এবং বিভিন্ন ধরণের এনিমেশন চিত্রের জন্য দেওয়া হয়। চলচ্চিত্র জগতের সম্মানজনক এ পুরস্কারটির মর্যাদা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ব্রিটিশ অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চ সর্বোচ্চ সংখ্যক আট বার টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের চরিত্রের জন্য বাফটা পুরস্কার লাভ করেছেন।
গ্র্যামি
সঙ্গীতের অস্কার নামে পরিচিত বিশ্ব সংগীতাঙ্গনের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। ১৯৫৯ সাল থেকে আমেরিকাতে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। বিশ্বের অসংখ্য শিল্পীর সারা জীবনের সাধনা এ পুরস্কার। ৩৮ বার এ পুরস্কার জিতে স্যার জর্জ সলটি সবার থেকে এগিয়ে আছেন। এটি আমেরিকার সবচেয়ে সম্মানজনক সঙ্গীত পুরস্কার।
কান চলচ্চিত্র
১৯৪৬ সাল থেকে প্রতি বছর দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত হওয়া পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং প্রভাবশালী চলচ্চিত্র উৎসব কান চলচ্চিত্র উৎসব।
মূলত সারা বিশ্ব থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা উৎসবে আমন্ত্রিত হন। এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পামে দ’অর (গোল্ডেন পাম)। কান উৎসবের জন্য নির্মিত “পালে দে ফেস্তিভালস এ দে কোঁগ্র” ভবনে এ উৎসব হয়।
এমটিভি ভিডিও মিউজিক
১৯৮৪ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিউজিক টেলিভিশন চ্যানেল এমটিভির পক্ষে ভিডিও মিউজিকের কিংবদন্তীদের এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। জনপ্রিয় শিল্পী ম্যাডোনা ৬৯ বার মনোনয়ন পেয়েছেন এবং ১৯ বার এ পুরস্কার জিতেছেন। সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি দর্শক এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড সরাসরি উপভোগ করেন।
পুলিৎজার
পুলিৎজার পুরস্কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাপার সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সঙ্গীতের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বহুল সমাদৃত। খ্যাতনামা আমেরিকান সাংবাদিক পুলিৎজার জোসেফ বা জোসেফ পুলিৎজার, ১৮৪৭ সালের ১০ এপ্রিল জন্ম নেন। হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত অনুসন্ধানী ও সৃজনশীল সাংবাদিকতার কিংবদন্তি এই মানুষটিকে বলা হয় গ্র্যান্ডফাদার অব দ্য জার্নালিস্ট। তার আয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থ তিনি কলম্বিয়া স্কুল অব জার্নালিজমে (বর্তমানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) দিয়ে দেন। ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর পুলিৎজারের মৃত্যুর পর থেকে তার ইচ্ছানুসারে ও সম্মানে প্রথম ১৯১৭ সালের ৪ জুন থেকে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে পুরস্কারটি ঘোষিত হয়। জার্নালিজমে সোনার মেডেল ও অন্য ২০ ক্যাটেগরির বিজয়ীর প্রত্যেককে ১০ হাজার আমেরিকান ডলার (প্রায় সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা) ও সনদ দেওয়া হয়।
ব্রিটস
ব্রিটেনের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় পুরস্কার ব্রিটস অ্যাওয়ার্ড। ১৯৭৭ সাল থেকে মিউজিকের ওপর এ পুরস্কার দেওয়া হয়। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্রিটস সম্মাননা যে কোন বিজয়ীকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে অনন্য মর্যাদায়। প্রতিটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ পুরস্কার প্রদানের খবর প্রচার করা হয়। রবিন উইলিয়াম সর্বোচ্চ ১৫ বার এ পুরস্কার জিতেছিলেন।
দাদাসাহেব ফালকে
ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক বলে পরিচিত ফালকে ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার নামানুসারে প্রবর্তিত এই সন্মাননা শুধু ভারতের সিনেমার জন্য হলেও এর মর্যাদার রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ভারতের সর্ব্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ভারতীয় চলচ্চিত্রে দাদাসাহেব ফালকের অবদানের স্বীকৃতিতে ভারত সরকার ১৯৬৯ সালে প্রথম এই পুরস্কারের প্রচলন করে। ডিরেক্টরেট অব ফিল্ম ফেষ্টিভ্যাল এ পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এই সংস্থাটি নিয়ণ্ত্রণ করে ভারত সরকার। এ সংস্থাটি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত পরিচালক, অভিনয়শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করা ছাড়াও ভারতীয় চলচ্চিত্রের আধুনিকায়ন প্রগতির জন্য অবদান রেখে থাকে। দেশের সন্মানীয় ও প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদ্বারা গঠিত একটি কমিটি এ পুরস্কারের জন্য যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করে থাকে। বিজেতা পুরস্কার হিসেবে পান একটি স্বর্ণকমল পদক, নগদ ১০ লাখ রুপি ও একটি শাল।
মাদার তেরেসা
মাদার তেরেসা পুরস্কার, যা সরকারিভাবে মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ডস অফ সোস্যাল জাস্টিস নামে পরিচিত। যে ব্যক্তি ও সংস্থাগুলি শান্তি, সাম্যতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রচার করে এবং সম্মান এবং ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে তাদের উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পুরস্কার হিসাবে প্রতিবছর এটি প্রদান করা হয়। মাদার তেরেসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেকে উৎসাহিত করা ও মূল্যবোধগুলিকে নিবিষ্ট করার জন্য সমাজকে একটি প্রেরণা সরবরাহ করেন যারা তাদেরকে মাদার তেরেসার সম্মানে পুরস্কার দেওয়া হয়। মাদার তেরেসা পুরস্কার ২০০৪ সাল থেকে বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিকভাবে দেওয়া হচ্ছে। এটি মুম্বাইয়ের আব্রাহাম মাথাইয়ের তৈরি একটি সংস্থা যা হারমনি ফাউন্ডেশনের একটি উদ্যোগ। মিশনারি অফ চ্যারিটি কর্তৃক স্বীকৃত মাদার তেরেসার নামে এটিই একমাত্র পুরস্কার। এই নামের আরেকটি পুরস্কার, কিছুটা ভিন্ন উদ্দেশ্যে পুরস্কার প্রাপ্ত, মাদার নির্মলা সেন্ট বার্নাডেট ইনস্টিটিউট ফর স্যাক্রেড আর্ট ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছিল
ফিল্ডস
ফিল্ডস পদক অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়সী দুই, তিন বা চারজন গণিতবিদকে প্রদানকৃত একটি পুরস্কার, যা প্রতি চার বছর অন্তর আন্তর্জাতিক গণিত সংঘের আন্তর্জাতিক গণিতবিদদের মহাসভাতে প্রদান করা হয়।
ফিল্ডস পদককে কোনও গণিতবিদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানবাহী পুরস্কারগুলির একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এটিকে গণমাধ্যমে গণিতের নোবেল পুরস্কার হিসেবেও কখনও কখনও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে নোবেল পুরস্কারের সাথে এর বেশ কিছু পার্থক্য আছে, যার মধ্যে কত বছর পর পর দেওয়া হয়, কতগুলি দেওয়া হয় এবং বয়সসীমা, ইত্যাদি উল্লেখ্য। বার্ষিক উচ্চশিক্ষায়তনিক উৎকর্ষ সমীক্ষা (বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচ্চশিক্ষায়তনিক মর্যাদাক্রম দ্বারা পরিচালিত) অনুযায়ী ফিল্ডস পদককে বিশ্বব্যাপী গণিতশাস্ত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়।২০১৩-১৪ সালে আইআরইজি পরিচালিত আরেকটি খ্যাতি সমীক্ষা অনুযায়ী ফিল্ডস পদককে আবেল পুরস্কারের পরে গণিতশাস্ত্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাবাহী আন্তর্জাতিক পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা হয়।
আবেল
আবেল পুরস্কার একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার যা প্রতি বছর নরওয়ে সরকার এক বা একাধিক গণিতবিদকে কে গণিতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রদান করে থাকে। এই পুরস্কারটি বিখ্যাত নরওয়েজীয় গণিতজ্ঞ নিল্স হেনরিক আবেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। নরওয়েজীয় সরকার এর প্রচলন শুরু করে ২০০১ সালে। এই পুরস্কারের পাশাপাশি নরওয়েজীয় সরকার মানবিক বিদ্যায় অবদানের জন্য হোলবার্গ পুরস্কার নামে একটি পদক প্রদান করে থাকে। ফিল্ডস পদকের পাশাপাশি আবেল পুরস্কারও বিশ্বব্যাপী গণিতের ‘নোবেল পুরস্কার’ নামে সুপরিচিত।এই পুরস্কারের অধীনে বিজয়ীকে ৬ মিলিয়ন নরওয়েজীয় ক্রোন প্রদান করা হয় (৭৩০,৮০০ মার্কিন ডলারের সমতূল্য)। পুরস্কারটির বোর্ড আবেল সম্মেলন নামের একটি বার্ষিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে থাকে যা নরওয়েজিয়ান ম্যাথমেটিকাল সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত হয়। আবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি ইউনিভার্সিটি অব অসলোর আইন অনুষদ ভবনে আয়োজিত হয়। এই ভবনে ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হত।
কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস
কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস প্রাইজ ফর অ্যাপ্লিকেশন অব ম্যাথমেটিক্স একটি গণিতশাস্ত্রের উপর দেয়া পুরস্কার। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিকাল ইউনিয়ন এবং জার্মান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি যৌথভাবে এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে গণিতক্ষেত্রের বাইরে গণিতের উপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য। পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিডরিশ গাউসের নামানুসারে। এটি প্রথম প্রদান করা হয় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে। প্রতি চার বছর অন্তর এই পুরস্কার প্রদান করা হবে গণিতবিদদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে। প্রাক্তন বিজয়ীকে প্রদান করা হয় একটি পদক এবং ১০হাজার ইউরো। এর অর্থায়ন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব ম্যাথমেটিশিয়ান্সের ১৯৯৮ এর বাজেট উদ্বৃত্ত থেকে। এ পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে ৩০শে এপ্রিল, ২০০২ এ। এ দিনটি ছিল গাউসের ২২৫তম জন্মদিন। এ পুরস্কারটির প্রচলন করা হয় বিশেষত গণিতবিদদের কাজকে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্দেশ্যে। গণিতবিদরা তাদের বিষয়ের বাইরেও জগতে প্রভাব ও অবদান রাখেন, কিন্তু তাদের গবেষণা প্রায়ই স্বীকৃতির অতীত হয়ে যায়। এজন্য যারা গণিতক্ষেত্রে কাজ করেও গণিতের বাইরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব রাখেন যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এমনকি দৈনিক দিনযাপনে তাদের অবদানকে সম্মান জানাতেই গাউস পুরস্কারের আবির্ভাব।
কিয়োটো পুরস্কার
কিয়োটো পুরস্কার হল কলা ও বিজ্ঞানে আজীবন কৃতিত্বের জন্য জাপানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত পুরস্কার। এটি কেবল মাত্র তাদেরই দেওয়া হয় না যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের শীর্ষ প্রতিনিধি, তবে “যারা মানবজাতির বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন” তাদেরও দেওয়া হয়। কিয়োটো পুরষ্কারটি নোবেল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল এবং অনেকে এটিকে জাপানের নোবেল পুরস্কারের সংস্করণ হিসাবে বিবেচনা করে, ঐতিহ্যগতভাবে নোবেল দিয়ে সম্মানিত নয় এমন ক্ষেত্রে উপলব্ধ সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি প্রতিনিধিত্ব করা। পুরষ্কার প্রতি বিভাগে ১০০মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৮লক্ষ ইউএসডি) সহ দেওয়া হয় এবং কাজুও ইনামোরি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইনামোরি ফাউন্ডেশন দ্বারা ১৯৮৫ সাল থেকে বার্ষিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রতি জুন মাসে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়; প্রতি নভেম্বর মাসে জাপানের কিয়োটোতে পুরষ্কার উপস্থাপনা অনুষ্ঠান এবং সম্পর্কিত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
টেম্পলটন
টেম্পলটন পুরস্কার একটি স্যার জন টেম্পলটনের নামে প্রদত্ত একটি বার্ষিক পুরস্কার। স্যার জন টেম্পলটনের মানবহিতৈষী দর্শনকে (“মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্য ও মানবজাতির অবস্থান অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগানো এবং এতে উদ্দেশ্য নিহিত করা”) সামনে রেখে কাজ করে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য লাভ করা জীবিত ব্যক্তিদের এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। জন টেম্পলটন ১৯৭২ সালে পুরস্কার চালু করেন এবং তিনিই পুরস্কারের অর্থের জোগান দিতেন ও নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে টেম্পলটনের অনুসারীরা পুরস্কারের অর্থের জোগান দিলেও মূলত জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন পুরস্কার প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রথম দিকে শুধুমাত্র ধর্মের জন্য কাজ করা মানুষেরাই পুরস্কার পেতেন। ১৯৭৩ সালে মাদার তেরেসা প্রথম টেম্পলটন পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু ১৯৮০ এর দশক থেকে ধর্মের সাথে সাথে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা মানুষদেরও পুরস্কারপ্রাপ্তির পথ প্রশস্ত হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কারের নাম ছিল “টেম্পলটন প্রাইজ ফর প্রোগ্রেস ইন রিলিজিওন” (ধর্মের অগ্রগতির জন্য টেম্পলটন পুরস্কার)। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একে বলা হতো “টেম্পলটন প্রাইজ ফর প্রোগ্রেস টুওয়ার্ড রিসার্চ অর ডিসকভারিজ অ্যাবাউট স্পিরিচুয়াল রিয়েলিটিজ” (আধ্যাত্মিক বাস্তবতার অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণা বা উদ্ভাবনের জন্য টেম্পলটন পুরস্কার)। হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন এবং এই পুরস্কারের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আইসিসি
আইসিসি পুরস্কার (ওঈঈ অধিৎফং) ক্রিকেট খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট একগুচ্ছ পুরস্কারবিশেষ। এ পুরস্কারের মাধ্যমে পূর্বের বারো মাসের সবচেয়ে সেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়দেরকে স্বীকৃতিসহ সম্মানিত করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বার্ষিকভিত্তিতে ২০০৪ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেটভূক্ত দেশসহ সহযোগী সদস্যদেশের খেলোয়াড়দের মাঝে অদ্যাবধি পুরস্কৃত করে আসছে।
-বাবু/এ.এস