শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫ ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫
ক্ষুধা সূচকে মাঝারি হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশ: কামরুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ PM আপডেট: ০৮.০২.২০২৩ ৯:০৬ PM

গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (GHI) ২০২২-এ বাংলাদেশ মাঝারি বিভাগে পড়ে। যদিও  দেশটি বিগত বছরগুলির তুলনায় দৃশ্যমান উন্নতি দেখিয়েছে। GHI ২০২২ অনুযায়ি, ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪ তম স্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশ ২০১৪ থেকে শতকরা ২৫.৫ ভাগ উন্নতি করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬.৩, যা ক্ষুধা সূচকে গুরুতর  বলে বিবেচিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে, এদেশে অপুষ্টির হার, শিশু স্টান্টিং এবং শিশুমৃত্যুর হার সবই কমে গেছে। শিশু অপচয় (Child Wasting)-এর হার পূর্ববর্তী বছরগুলিতে উচ্চ হার ছিল। এই হারও ২০১৪ সালের ১৪.৪ শতাংশের তুলনায় বর্তমানে ৯.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে চাইল্ড স্টান্টিংয়ের হার দেশে ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।  দরিদ্র-বান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পিতামাতার শিক্ষা লাভ, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এবং জনসংখ্যাগত উন্নতি সর্বোপরি ক্রমবর্ধমান পারিবারিক  অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর কারণ বলে বিবেচিত। যদিও বর্তমানে শিশু স্টান্টিংয়ের মাত্রা ২৮.০ শতাংশ, যা উচ্চহার হিসাবে বিবেচিত করা হচ্ছে।

সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ উন্নতি করলেও, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, ভয়াবহ বন্যা এবং জলবায়ুসংকটের কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলি ইতিমধ্যেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের  শিকার সমাজের দরিদ্রতম অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ  কামরুল ইসলাম এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ  অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের  (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ড. হাসান শাহরিয়ার কবির এবং কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ড. শেখ মোহাম্মদ  বখতিয়ার।

“সাম্প্রতিক যুদ্ধ, মহামারী এবং জলবায়ুপরিবর্তন লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থসামাজিক অবনতির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের  জিএইচআই স্কোর অতীতের তুলনায় ভালো হয়েছে, উদ্বেগজনক মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে  বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের অবশ্যই সকল স্তরে অধিকার ভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত  করতে হবে। এবং এটি অর্জনের জন্য, সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই স্থানীয় জনগনকে কাজে লাগাতে  হবে এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেইসাথে মাল্টিস্টেকহোল্ডার  প্ল্যাটফর্মগুলিকে সংগঠিত করে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষুধা মোকাবেলায় নীতি নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে  হবে”,-ফাতিমা আজিজোভা, হেড অফ মিশন, ওয়েলথহাঙ্গারহিলফে বাংলাদেশ।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, “বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা এবং জিএইচআই অনুযায়ী পুষ্টি সহ বেশকিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছুচ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও ইতিমধ্যেই দেশ ও বিশ্বের অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের শক্তিশালী  পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহন খাদ্য ব্যবস্থার ইতিবাচক রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য সেক্টর সহ আমাদের সকলকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে “ভবিষ্যতের সংকট এড়াতে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড আরও ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার  প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।”

“বিশাল চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে যা  গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স রিপোর্টে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু তারপরও খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে একটা চাপা উদ্বেগ রয়েছে। খাদ্যের  প্রাপ্যতা সবসময় মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সীমিত করার প্রধান কারণ নয়। তাই, সকল স্তরের সরকারী ও বেসরকারী দায়িত্বশীলদের অবশ্যই খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের এই প্রচেষ্টার কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও জবাবদিহিতা রাখতে হবে, এবং খাদ্যের অধিকারকে সম্মান, সুরক্ষা এবং পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে” বলেছেন শামীম আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর,  হেলভেটাস, বাংলাদেশ।

বৈশ্বিকভাবে, ইয়েমেনের জিএইচআই স্কোর সর্বোচ্চ (সর্বোচ্চ ক্ষুধার মাত্রাকে প্রতিফলিত করে) এবং ক্ষুধা সূচকের উদ্বেগজনক বিভাগে  রয়েছে।

ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমস্যায় কিছু এলাকা সংকটে থাকলেও প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা হ্রাসে অগ্রগতি হয়েছে, বৈশ্বিক  জিএইচআই স্কোর ২০১৪ সালে ১৯.১ থেকে ২০২২ সালে ১৮.২-তে হ্রাস পেয়েছে। তবে, একটি সূচকে দেখা যায় যে পর্যাপ্ত  ক্যালোরির যোগাড় করতে পারছেনা এমন মানুষের হার বেড়েছে। এর অর্থ হল গত কয়েক দশকের অগ্রগতির বিপরীতমুখী। 
গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স, এখন ১৭ তম বছরে পা দিয়েছে। চারটি মূল সূচকের উপর ভিত্তি করে দেশগুলিকে বাছাই করা হয়: অপুষ্টি,  চাইল্ড স্টান্টিং, চাইল্ড ওয়েস্টিং এবং শিশুমৃত্যুর হার। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে ১২১টি দেশকে এই গবেষণায় স্থান দেওয়া হয়েছে,  যার মধ্যে ৪৪টিতে ক্ষুধার মাত্রা গুরুতর বা উদ্বেগজনক। 

আরও তথ্যের জন্য- www.globalhungerindex.org

ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফে জার্মানির বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। আমরা দ্রুত জরুরি ত্রাণ থেকে  পুনর্বাসন পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পার্টনার সংস্থাগুলির সাথে স্ব-সহায়তার মাধ্যমে সাহায্যের নীতি অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন  সহযোগিতার নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে ক্ষুধা  ও দারিদ্র্যের অবস্থার পরিবর্তন করা আমাদের লক্ষ্য। ভিজিট করুন: www.welthungerhilfe.de|

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড একটি বেসরকারী আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা যা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং চরম দারিদ্র্যের চুড়ান্তভাবে নির্মূলের উদ্দেশ্যে কাজ করে। আমাদের লক্ষ্য হল চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের স্থায়ীভাবে জীবন উন্নয়নে সহায়তা করা। এই লক্ষ্যেই কনসার্নের এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সহমত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পার্টনারদের সাথে নিয়ে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড দরিদ্রদের সাথে নিয়ে কাজ  কওে যাতে একটি ন্যয়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ একটি সমাজ গড়ে ওঠে যেখানে দরিদ্ররা তাদের মৌলিক অধিকারগুলো সঠিকভাবে চর্চা করতে পারে। 

হেলভেটাস এমন একটি সংস্থা যা একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে একটি টেকসই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার  করে সমস্ত নারী ও পুরুষ সসম্মানে ও নিরাপদে তাদের জীবনকে যাপন করতে পারবে। । বিভিন্ন প্রকল্প, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং দরিদ্রদের জন্য উপযোগি সুবিধাজনক কাঠামোর জন্য পরামর্শের মাধ্যমে হেলভেটাস অংশীদারদের সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন স্তরে বৈশ্বিক  চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে। এই তিন ধরনের প্রতিশ্রুতি মানুষকে ক্ষমতায়ন করে এবং জীবনে পরিবর্তন আনে। হেলভেটাস সিভিল  সোসাইটি বা সুশীল সমাজ, সরকার এবং বেসরকারী খাতকে সংযুক্ত করে সহযোগীতামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এটি পানি ও স্যানিটেশন,  কৃষি ও পুষ্টি, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও শান্তি এবং জলবায়ুও পরিবেশ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। হেলভেটাস বিভিন্ন দুর্যোগে জরুরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। ভিজিট করুন: www.helvetas.org

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত