শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
প্রস্রাব ধরে রাখা যায় না কেন? সহজ ব্যয়ামেই প্রতিকার
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:৫৯ AM

প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে না গেলে পোশাক ভিজে যাচ্ছে। প্রস্রাব ধরে রাখা যাচ্ছে না। এই সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়েই ভোগেন। তবে এ ভোগান্তিতে পড়েন নারীরাই বেশি।

অনেকের হাঁচি দিলে, কাঁশলে অথবা বাথরুমে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ প্রস্রাব হয়ে যায়। এই সমস্যাটি ঠিক কোনো রোগ নয়, এটা হলো মূত্রাশয় বা মূত্রনালী সংক্রান্ত রোগের একটি লক্ষণ। মেডিক্যালের ভাষায় একে ‘ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স’ (Urinary Incontinence) বলা হয়। এই সমস্যা বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই ভোগেন। এ ছাড়াও অনেক নারী নরমাল ডেলিভারির পর এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। যদিও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এটি গুরুতর সমস্যা নয়, কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। অনেক সময় এই নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হঠাৎ করে অল্প কিছুদিনের জন্য দেখা দেয়। যে রোগের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে তার চিকিৎসা করলে এটি সেরেও যায়। তবে ক্রনিক ডিজিজ হলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

কেন হয়?

১। মূত্রথলি সংকুচিত হতে শুরু করলে অথবা যখন সংকুচিত হওয়া উচিত তখন না হয়ে অত্যধিক প্রস্রাবে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রবল চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মূত্র বেরিয়ে আসে। এ ছাড়াও মূত্রাশয় ও মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী ঠিকমতো কাজ না করলেও এই সমস্যা হতে পারে।

২। নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়, অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে পেটের নিচের পেশীগুলো শিথিল হয়ে যেতে পারে। তখন মূত্রথলি প্রস্রাব ঠিকমতো ধরে রাখতে পারে না। মূত্রথলি নিচে নেমে যে পেশীগুলো মূত্রনালীকে চেপে রাখতে সাহায্য করে তাদের কাজে বাঁধা দেয়।

৩। পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারির পর এই সমস্যা দেখা দেয়। কোনো কারণে এই সার্জারির সময় স্নায়ু বা মূত্রনালীর চারপাশের পেশী আঘাত পেলে সেটা অকেজো হয়ে পড়তে পারে বা তার শক্তি কমে যেতে পারে। তখন মূত্রথলির উপর চাপ পড়লে প্রস্রাব আটকে রাখা যায় না।

৪। অনেক সময় প্রস্রাবের পরও মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হয় না। একটু একটু করে তখন মূত্র ঝরতে থাকে। মূত্রথলির পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে বা অন্য কোনো বাঁধার জন্য (যেমন- মূত্রনালী কোনো কারণে ক্ষুদ্র হয়ে গেলে কিংবা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে) এমন হতে পারে। মূত্রনালীকে যে পেশীগুলো চেপে বন্ধ করে রাখে সেগুলোর জোর কমে গেলে সব সময় একটু একটু করে প্রস্রাব ঝরতে থাকে।

৫। মূত্রতন্ত্রের কোনো সংক্রমণ, মূত্রথলির ক্যানসার, প্রস্টেটের সমস্যা, পারকিনসন ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদির কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।

৬। এ ছাড়াও স্ট্রেস অথবা টেনশনের কারণেও অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দেয়। এটা সাধারণত ঘটে যখন কোনো কারণে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে। যেমন- কাঁশি দিলে, হাঁচি দিলে, জোরে হাসলে বা ভারী ওজনের জিনিস তুললে।

চিকিৎসা ও ব্যায়াম 
এ সমস্যা দেখা দিলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে লজ্জা পান। এতে কিন্তু সমস্যা কমে না, বরং দিন দিন এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। তাই সমস্যার মুখোমুখি হলে সবার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক রোগীর রোগের তীব্রতা অনুসারে ওষুধ দেন। সেগুলো নিয়মিত সেবনে এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। এ ছাড়া ফিজিওথেরাপি বা সার্জারি করেও সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স এর সমস্যা কমাতে কয়েক ধরনের ব্যায়ামও খুব ভালো কাজ করে। যেমন-

ব্লাডার ট্রেনিং
এই ট্রেনিং এ প্রস্রাবের বেগ শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর প্রস্রাব করার অভ্যাস করানো হয়। এই ব্যায়ামটি প্রস্রাব ধরে রাখতে শেখায়।

হোল্ড রিল্যাক্স টেকনিক
আদতে এই টেকনিকটি রিল্যাক্স করার মতোই। এই ব্যায়াম করার সময় একটি পা স্ট্রেচ করে কিছুক্ষণ হোল্ড করুন। একইভাবে অন্য পায়েও টেকনিকটি ফলো করুন।

ডাবল ভোয়েডিং
এ প্রক্রিয়ায় প্রস্রাব করার পর কিছু সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে আবারও প্রস্রাবের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া বেগ না এলেও ২/৪ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব করার চেষ্টা করতে হয়।

পেলভিক ফ্লোর মাসল এক্সারসাইজ 
চেয়ারে বসে মেরুদণ্ড সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশীগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থেকে সংকুচিত মাংসপেশী ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন। এই এক্সারসাইজটি মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে তোলে।

ব্রিজিং
সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করে নিন। এবার ধীরে ধীরে কোমর ওপরের দিকে ওঠান। ৫ সেকেন্ড এভাবে ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এই ব্যায়ামটিও দিনে ৪ বেলা এবং প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার করুন।

কেগেল এক্সারসাইজ
কেগেল এক্সারসাইজ করার জন্য মাটিতে চিত হয়ে সোজা ভাবে শুয়ে পড়ুন। দুটো পা ফাঁক করে রাখুন, হাত দুটি শরীরের দুই পাশে সোজা করে রাখুন। এবার শরীরের নিম্নভাগ (বুকের নীচ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত) উপরের দিকে উঠিয়ে দিন। এভাবে ১৫ পর্যন্ত গুনুন। এ অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। হয়ে গেলে ধীরে ধীরে শরীর নীচের দিকে নামিয়ে দিন। ব্যায়ামটি প্রতিদিন ৪/৫ বার করুন।

প্রতিরোধের উপায়
সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই সেটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা উচিত। প্রস্রাব ঝরে পড়ার সমস্যা কমাতেও তাই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-

-টেনশনমুক্ত থাকুন
-এক্সারসাইজ করে মূত্রথলির মাংসপেশীকে শক্তিশালী করুন
-বেশি করে পানি পান করুন
-অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
-ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন

রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করা নিয়ে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ সুস্থ থাকার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি। প্রস্রাব ঝরে পড়ার সমস্যা যেহেতু পরবর্তী সময়ে আরও রোগের সৃষ্টি করতে পারে, তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আগে থেকে সতর্ক রাখুন।

সূত্র: সাজগোজ ডটকম

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  প্রতিকার   নারী-পুরুষ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত