বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫ ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
প্রকল্প বাস্তবায়নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অভাবনীয় সাফল্য
ইমামুল ইসলাম
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩, ৩:১৬ PM আপডেট: ১৫.০৩.২০২৩ ৩:২১ PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী উদ্যোগ ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন দপ্তরের প্রকল্পগুলোতে। ফলে এ মন্ত্রণালয় এপিএ মূল্যায়নে ৫৪তম অবস্থান থেকে এখন ৪ নম্বরে উঠে এসেছে। 

বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ততা বিচার করে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করায় এ সাফল্য এসেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

দুর্নীতি হ্রাসে লোকাল কমিটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম তদারকি, সেচ প্রকল্প, নদী ভাঙন রোধ, বালু উত্তোলন বন্ধ, উপকুলীয় এলাকার বাঁধগুলোতে ভাঙন রোধের কাজ, নদী ব্যবস্থাপনা ও ড্রেজিংসহ বিভিন্ন কাজে সুষ্ঠু তদারকি ও সচ্ছতার সঙ্গে করে যাচ্ছে এই মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, ডেল্টা প্লান-২১০০ মহাপরিকল্পনায় ৬৫টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে ৪৫টি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। দেশের বড় বড় নদ-নদী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা দিকনির্দেশনা আছে। ওই নির্দেশনায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ বড় বড় নদীর প্রস্থ কমিয়ে আনার প্রস্তাব রয়েছে। এসব নদীর প্রস্থ প্রায় ৯-১৬ কিলোমিটার। এগুলোর প্রস্থ ৫-৭ কিলোমিটারে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব নদীতে ড্রেজিং করে এবং মাটি দিয়ে নদীর দু’পাশে বাঁধের উপর বনায়ন করা হবে।

নদীর দু’পাশের জমি রিক্লেইম করে জমিগুলোকে ফ্লাড প্লেইন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। অতিবৃষ্টিতে যখন নদী পানি ধারণ করতে পারে না, তখন অতিরিক্ত পানি ফ্লাড প্লেইন ধারণ করবে। কোনো অবস্থাতেই এ পানি ফ্লাড প্লেইনের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী যে ডেল্টা প্লান-২১০০ দিয়েছেন, তারই একটা অংশ এ প্রকল্প।

যেসব প্রকল্প ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সাফল্য আনছে সেগুলো হলো -

নদী ব্যবস্থাপনা ও ড্রেজিং :
বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢল আমাদের দেশের উপর পতিত হয়। ফলে  চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের মানুষকে। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির অপ্রতুলতায় দেশের চাষাবাদ ব্যাহত হয়। উজানের ঢলে পানির সাথে সেডিমেন্ট বা পলিমাটিও নেমে আসে। এ সেডিমেন্টের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। ফলে ড্রেজিংয়ের সুবিধা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রতিবছরই ড্রেজিংয়ের কাজ করতে হয়। অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজিং করার পর বর্ষা মৌসুমে নদী ফের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। 

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে- নদীকে অনুশাসনের উদ্দেশে কাজ করা, ভাঙন রোধ করা ও তীর রক্ষা করা। আগে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীকে শাসন করে তারপরে বাঁধ নির্মাণ করতে হয়। তা না হলে নদীর বাঁধ টেকসই হয় না।

উপকূলীয় বাঁধ ও ভাঙন রোধ :
উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বাঁধ পাকিস্তান আমলের। এ বাঁধগুলোর উচ্চতা খুবই কম, ৯ ফুট বা তিন মিটার। তখন এ বাঁধ দেওয়া হয়েছিল বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি প্রতিরোধের জন্য। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশে পরিণত হয়েছে। আইলা-আম্ফানের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সেই পুরনো ধাচের বাঁধ এখন কার্যকর না। ফলে আগত তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই বাঁধই এখন তৈরি করা হচ্ছে।

নদীভাঙন ও বালু উত্তোলন :
নদীর ভাঙন রোধে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তবে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই সমাধান নয়। ভাঙন রোধে ব্লক ফেললেও দেখা যায় এর পাশ দিয়েই ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনের কারণ নদী থেকে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধ করতে সাধারণ মানুষকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসন বালু উত্তোলনের জন্য বালুমহাল ইজারা দিয়ে থাকে। সে ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে কোন কোন জায়গা থেকে বালু তোলা যাবে না। তবে অনেক সময় ইজারাদাররা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নদীর তীরসংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে। ফলে নদীর তীর সংরক্ষণ করা যায় না, ফের ভাঙন শুরু হয়। নদীশাসন ও নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধ না করা গেলে প্রকল্পগুলোর সুফল অনেকাংশে কমে যাবে।

সেচ প্রকল্প :
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনেক সেচ প্রকল্প রয়েছে। বর্ষা আসার আগে বোরো ধান তুলতে হয়। আকস্মিক বন্যা এসে বোরোর ক্ষতি করে। এ মন্ত্রণালয় দেশে ১৩৭টি সেচধর্মী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে; ফলে ৬৫.১২ লক্ষ হেক্টর জমি সেচ ও পানি নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় এসেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম :
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সব প্রতিষ্ঠান অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন গতিশীল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা এখন প্রকল্প এলাকাগুলোতে কাজ পরিদর্শনের উদ্দেশে রাতযাপন করেন। প্রধান প্রকৌশলীরা মাঠ পরিদর্শনে যান। মোটকথা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তবে দুর্বল দিক হলো জনবলে এখনো  চল্লিশ শতাংশের ঘাটতি রয়েছে।
 
দুর্নীতি হ্রাসে পদক্ষেপ :
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোথাও কোনো প্রকল্প চললে সেখানে স্থানীয়ভাবে একটি লোকাল কমিটি করা হয়ে থাকে। লোকাল কমিটিতে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য (স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম কিংবা এনজিও কর্মী কিংবা সমাজকর্মী) যুক্ত থাকে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে ওই কমিটির মতামত নেওয়া হয় কাজটি ঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা।

উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, প্রজন্মের  কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করেছেন। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিংহভাগ দায়িত্ব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের  উপর। এ মহাপরিকল্পনায় পানিসম্পদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের দুর্বল দিকগুলো কী কী জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, বিএনপি-জামাত সরকারের সময় এ মন্ত্রণালয় খুবই অব্যবস্থাপনায় ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এসব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে মন্ত্রণালয়কে অনেক গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছি।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত