পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড় জেলায় সংসদীয় আসন দুইটি। পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ এবং বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-২ আসন। জেলাটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়। সেই থেকে দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আসন দুটিতেই প্রধান দুই দলসহ অন্যান্য দলে চলছে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি। তবে এবারের চিত্রটি ভিন্ন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আসন দুটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিভিন্নভাবে তারা ভোটারদের জানান দিচ্ছেন নিজেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে।
পঞ্চগড়ে সহনশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান এই জেলার রাজনৈতিক ঐতিহ্য। এজন্য রাজনৈতিক হানাহানি নেই বললেই চলে। কিন্তু যে কোনো নির্বাচন এবং রাজনীতির ঘটন-অঘটন পঞ্চগড়ের মানুষকে বরাবরই আলোড়িত করে। জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় আড্ডা ও আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে রাজনীতি ও প্রার্থিতা। হাটবাজার, শহর, গ্রামে সম্ভাব্য প্রার্থিতার পোস্টার, ব্যানার টানানো হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী প্রত্যেকেই ছুটে বেড়াচ্ছেন। উঠান বৈঠক, পথসভাসহ মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের নেতাকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। এ জন্য তারা নিজ নিজ নেতার জন্য কাজ করছেন। অন্যদিকে বিএনপি আন্দোলনে থাকায় করণীয় সম্পর্কে নেতাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। হতাশা ও আতঙ্ক আছে তাদের মাঝে। অনেকে রাজনৈতিক মামলার আসামি হওয়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই তৎপর।
পঞ্চগড়-১ (পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া) :
এ আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মাজাহারুল হক প্রধান ২০০৮ সাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। তৃণমূলে তিনি জনপ্রিয়। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। স্বাভাবিকভাবে আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট তরুণ নেতাকর্মীদের কাছে হার্টথ্রব। পিতা ও পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় এবং বেশ কয়েকবার জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তার অবস্থানও ভালো। আশির দশকে ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা ছিলেন আবদুল লতিফ তারিন। পরবর্তীতে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পান। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি। তিনিও প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। দীর্ঘকালের রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে আবু তোয়বুর রহমানের। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তিনি। এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চান তিনি। তরুণ এবং বয়স্ক মানুষের আরেক পরিচিতমুখ নাঈমুজ্জামান মুক্তা। বামধারা থেকে উঠে আসা এই রাজনৈতিক নেতা নানা ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে অল্প সময়েই পরিচিতি পান। চাকরি সূত্রে একসময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে তার যোগাযোগ আছে। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগে তার পদ-পদবি না থাকলেও এবার তিনি সহ-সভাপতি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে আসছেন।
এ আসনে বিএনপি এখনো আন্দোলনেই ব্যস্ত সময় পার করছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেই জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ক্লিন ইমেজের কারণে সর্বস্তরে তার জনপ্রিয়তা আছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা নাজমুল হক প্রধান জাসদ দুই ভাগ হলে তিনি বাংলাদেশ জাসদ নামে একটি নতুন দল ঘোষণা করেন। সেই দল থেকে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাগপা অংশ নিলে এ দলের প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ছেলে রাসেদ প্রধান প্রার্থী হবেন। জাতীয় পার্টি থেকে আবু সালেক মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
পঞ্চগড়-২ (বোদা ও দেবীগঞ্জ) :
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুজন। বোদা উপজেলা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আন্তঃকোন্দল রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরেই দেবীগঞ্জ উপজেলাবাসী তাদের এলাকার প্রার্থীকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান। বোদা উপজেলার ভোটার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবারও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। অন্যদিকে, দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চিশতীও দীর্ঘদিন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবারও তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ। জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি লুৎফর রহমান রিপন এবং বাংলাদেশ জাসদের এমরান আল আমীন প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধানও হতে পারেন এই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী।
বাবু/জেএম