শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর আশপাশেই পলাতক জঙ্গিরা
মূল সমন্বয়ক শিখাকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ, আসছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ইমরান আলী
প্রকাশ: সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩, ২:২৬ PM আপডেট: ১০.০৪.২০২৩ ২:৩৪ PM
রাজধানীর আশপাশেই অবস্থান করছে ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও শামিম ওরফে সিফাত। সর্বশেষ তাদের অবস্থান ছিল নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে। সেই রূপগঞ্জের বাসাতেও অভিযানে যায় কাউন্টার টেরোরিজম। কিন্তু তাকে না পাওয়া গেলেও ওই বাসা থেকে তাদের অবস্থানের আলামত পায় সিটিটিসি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এছাড়াও রিমান্ডে থাকা ছিনতাইয়ের ওই ঘটনার মূল সমন্বয়কের কাছ থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেগুলোও যাচাই বাছাই চলছে বলে জানা গেছে। কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা রূপগঞ্জের এক বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু আমাদের যাওয়ার আগেই তারা সটকে পড়ে। আমাদের ধারণা তারা ঢাকার আশপাশেই রয়েছে। আমরা আমাদের  গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

সিটিটিসি সূত্র জানায়, শিখাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া শুরু করেছে। প্রথমদিনের জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক দু’জনের অবস্থান জানার চেষ্টা করা হয়। তার দেয়া সূত্রধরেই অভিযানে যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তারা যে ওইখানে ছিলেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাওয়া গেছে কিছু আলামত ও তাদের পরিকল্পনার নথি। 
মূল সমন্বয়ক শিখাকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

মূল সমন্বয়ক শিখাকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ


সূত্র জানায়, সোহেল যেহেতু তার স্ত্রীর গ্রেপ্তারে তথ্য জেনে গেছে সেহেতু সে রূপগঞ্জ থেকে পালিয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি। পুরো এলাকায় নজরদারী রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সে রাজধানীর ঢাকার আশপাশেই রয়েছে। অভিযান হচ্ছে, দ্রুতই জালে ধরা পড়বে। এর আগে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গত শনিবার গ্রেপ্তার জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী ফাতিমা তাসনীম শিখাসহ দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামি হলেন হুসনা আক্তার। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসি পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে শিখাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময়ে তার আশ্রয়দাতা হুসনাকেও গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। সিটিটিসি জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গি সদস্য ছিনিয়ে নেয়া চক্রের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা। পলাতক জঙ্গি সোহেল নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় অন্তত দুবার যাওয়া-আসাও করেছেন।   সিটিটিসি বলছে, আদালত চত্বর থেকে পুলিশকে আক্রমণ করে ছিনতাই হওয়া আনসার-আল-ইসলামের দুই জঙ্গি দেশেই আছে। আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ৬ মাস আগে থেকে কারাগারে গিয়ে গ্রেপ্তার শিখা সোহেলের সঙ্গে পালানোর যাবতীয় কৌশল রপ্ত করেন। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন শিখা। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার দিনও শিখা স্পটে ছিলেন এবং দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর একটি আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যান।

আদালত থেকে পালানোর পর শিখার নারায়ণগঞ্জের বাসায় সোহেলের যাতায়াত ছিল। এমনকি দু’বার সে সেখানে যায় বলেও জানায় সিটিটিসি।  সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে। এসময় মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত (২৪) ও মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা, পলাতক আসামি ও হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম জানায়, শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় এবং পরে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
 ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি

ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি


সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে শিখা আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ, দীপন ও নীলাদ্রি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন অ্যানক্রিপ্টেড অ্যাপস মাধ্যমে শিখা কারাবন্দি সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেপ্তারকৃতরা আরও জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। শিখা এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় একাধিক বাসা ভাড়া নেয় তারা। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, হামলা বা জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায় থেকে এসেছিল। এর বাইরে পরিকল্পনায় আরও যারা রয়েছে তাদের নাম পেয়েছি। তবে, তদন্তের স্বার্থে বলছি না।

জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পিত হলে গোয়েন্দারা আগে জানলো না কেন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, সবকিছুই যে গোয়েন্দারা জানতে পারবে এমন কোনো কথা নেই। কাজটি তারা অতি গোপনে করেছে। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গির সঙ্গে দেখা করেছে। স্বামী-স্ত্রী যখন হাজতখানায় দেখা করেছে। ইশারা-ইঙ্গিতে তারা একথাগুলো (পালিয়ে যাবার প্লান) বলেছে। আমরা যারা এসব নজদারি করি, তাদের নজর এড়িয়ে তারা কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে। দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার দিন আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী শিখা আদালত চত্বরে ছিল কিনা প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, হ্যাঁ, তারা সেখানেই ছিল। পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছিল। সেটা মনিটরিং করেছে শিখা আর সায়মান। এ অভিযানে ১০/১২ জন অংশ নিয়েছিল।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  জঙ্গি   পলাতক  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত