বাজারে নানা অজুহাতে বিক্রেতারা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। রমজানে খুব অস্বস্তি দিচ্ছে নিত্য পণ্যের দামে। কোনোভাবেই যেন কমছে না, মিলছে না ক্রেতা-বিক্রেতা কারও হিসাব নিকাশ।
ঈদুল ফিতরে দেশজুড়ে সেমাইয়ের চাহিদা থাকে ব্যাপক। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের দাম বেড়ে গেছে। শুধু সেমাইয়ের দাম নয়, বেড়েছে সেমাই রান্নার প্রধান উপাদান চিনি ও দুধের দামও। গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কিশমিশ ও কাজুবাদামসহ আনুষঙ্গিক অন্য পণ্যগুলোও।
সেমাই বাজার
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানই ফাঁকা, ক্রেতা কম। দোকানগুলোতে এখনো খোলা সেমাই আসেনি। ফলে বছর ব্যাপী বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের বনফুলের ২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা প্যাকেট। যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা প্যাকেট। একই সেমাই অনলাইন শপে ২০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় দোকানগুলোতে ৫ টাকা আর অনলাইন শপে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশি দামে। সে হিসেবে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৫০ টাকা বেশি। মিঠাইয়ের বাদাম কিশমিশ ও ঘি সমৃদ্ধ লাচ্ছা সেমাই ২০০ গ্রামের প্যাকেট ১৫০ টাকা। অথচ এক বছরে আগে ২৫০ গ্রাম সেমাই বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় মিঠাই ব্র্যান্ডেড সেমাইয়ের পরিমাণও কমেছে দামও প্যাকেট প্রতি বেড়েছে ৫০ টাকা।
মুদি
আজ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য অনুযায়ী বাজারে আজ সরু চাল (নাজির/ মিনিকেট) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা করে। মাঝারি চাল (পাইজাম/ লতা) বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা দরে। মোটা চাল (স্বর্ণা/ চায়না/ ইরি) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। আজ খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১২ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকায়। প্যাকেট আটার কেজি ৬৪-৬৫ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এছাড়া দেশি মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা দরে। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ১২০-১২৫ টাকা। বাজারে সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা দরে। এসব বাজারে লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুকনা মরিচ ৪০০-৪৪০ টাকা। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩৫ টাকা।
মুরগি
এদিন মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায় গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিলো ২২০-২৩০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে কেজি ছিলো ৩২০-৩৩০ টাকা। আর লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির মতো দাম কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের। আজ প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ফার্মের মুরগির ডজন ছিলো ১৪০ টাকা। তবে, হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা আর দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০-২২০ টাকা। অপরদিকে আজ বাজারে গরুর মাংস আগের দামেই কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা দরে।
সবজি বাজার
আজ সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, বরবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং সঁজনে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙাস প্রতি কেজি ২২০-২৩০ টাকা, ছোট ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকা, গলদা প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, মলা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, পাবদা প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, তেঁলাপিয়া প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার
মাছের বাজারেই আজ ক্রেতাদের বেশি ভিড় দেখা যায়। কয়েকজন মাছ বিক্রেতা বলেন, দাম কম হওয়ায় পাঙাশ-তেলাপিয়াই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মাছবাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজার ঘুরে তাঁর কাছে মনে হয়েছে, মাছের দাম কিছুটা কমেছে।
আজ বাজারে আদা (দেশি) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা। হলুদ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২৯০ টাকা। জিরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৬০ টাকা। দারুচিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৫২০। এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-২৫০০ টাকা। ধনে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৬০। তেজপাতা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা।