খরায় পুড়ছে দেশ। বৃষ্টির বালাই নেই। আকাশে কালো হয়ে মেঘ দেখা গেলেও পরক্ষণেই তা নেই। উধাও। বৃষ্টির ছিটেফোটাও নেই। বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকতে থাকতে বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রকৃতি ও কৃষিপণ্য। অনাকাঙ্খিত খরার দিকে যাচ্ছে দেশ। কৃষি ও কৃষকের স্বপ্ন।
তবে একটি বিশেষ প্রজাতির পাখির সাথে মেঘ-বৃষ্টির সম্পর্ক আছে। বৃষ্টি শুরু হলেই বা বৃষ্টির ঠিক আগ মূহুর্তে এই পরিযায়ী পাখিটি দেশে আসে। বৃষ্টিধারার সহস্রকণা গায়ে মাখতে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে বৃষ্টিপ্রিয় পরিযায়ী পাখিরা আমাদের দেশে ইতোমধ্যে চলে এসেছে। বৃষ্টিধারার মাঝে খাবারের সন্ধানে অবলীলায় চরে বেড়াতে পারে এরা।
আমাদের দেশের বর্ষা ডেকে আনে ‘শুমচা’ (Pitta) পাখিটি। অনাদিকাল ধরেই চলছে তার বর্ষামৌসুমের ধারাবাহিক প্রত্যাবর্তন। এই বর্ষাতেই পাখিটির জন্ম এবং এই বর্ষাতেই সে বারবার ফিরে আসে। শুমচার ছানাগুলো যখন সবালক হয় তখন সে এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশ হতে আবার বাংলাদেশে আসে এবং সেই একই প্রক্রিয়া বাসা বেঁধে ছানা তোলে। তবে শীত আসার পূর্বে সে ফিরে যায়।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখিবিশেষজ্ঞ এবং বার্ড ক্লাবে প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এই বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের কিছু পাখি রয়েছে যাদের বৃষ্টিতেই সুবিধা এবং তারা বৃষ্টিই খোঁজে। বৃষ্টিপ্রিয় এমন একটি পাখি ‘দেশি শুমচা’ (Indian Pitta)। ইতোমধ্যেই এই পাখিটি দেশে চলে এসেছে।’

পাখিটির খাবার সম্পর্কে তিনি বলে, ‘বৃষ্টিমৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল-মে এর দিকে সে আসে। কারণ বৃষ্টি তার ভীষণ দরকার। এ জন্যে যে, বৃষ্টিতে জঙ্গলের নিচে যেখানে পঁচা পাতা রয়েছে সেখানেই তার খাবার তৈরি হবে। অনেক পোকা হবে। অনেক কেঁচো হবে। কেঁচো সে খেতে খু্ব পছন্দ করে। বেশি বৃষ্টিপাত হলে কেঁচো মাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। তখন সে সেই কেঁচো ধরে খায়। কেঁচো ছাড়াও অন্যান্য পোকা সে খেয়ে থাকে।’
প্রজনেন কথা উল্লেখ করে ইনাম আল হক বলেন, ‘যখন সে পর্যাপ্ত খাবার পাবে তখন সে বাসা তৈরি করবে। বুনোগাছসহ আম, জাম বা কাঠাল গাছে পাতা দিয়ে বলের মতো বাসা তৈরি করে। এমনভাবে বাসা তৈরি করে যে পানি কিছুতেই বাসার ভেতরে ঢুকতে পারে না। সে শুকনো পাতা দিয়ে দিয়ে গোল করে বলের মতো বাসা তৈরি করে থাকে। এই জুলাই-আগস্টেই ওরা ছানা তুলবে। কারণ এই সময় বন-জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে পোকা হবে এবং এই খাবার খাইয়েই সে বাচ্চাগুলোকে বড় করে তুলবে।’
এ পরিযায়ীর ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর আসলেই বৃষ্টিপাত ফুরিয়ে আসবে তখন তার খাবারও কমে যাবে। এই অবস্থায় তার নিজের এবং তার বাচ্চার খাবারের টান পড়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে তার বাচ্চাও কিন্তু বড় হয়ে গেছে। তখন তারা আমাদের দেশ থেকে উড়ে চলে যাবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা বা দক্ষিণ ভারতের দিকে।’
দুই রকমের পরিযায়ী শুমচা রয়েছে। যারা আমাদের দেশের চিরসবুজ বনে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। একটি হলো দেশি শুমচা (Indian Pitta) অপরটি খয়রামাথা-শুমচা (Hooded Pitta)। এদের দুই প্রজাতিরই আকৃতি প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার বলে জানান এই পাখি বিজ্ঞানী।
-বাবু/এ.এস