২০২২ সালের ৩০ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলন। কমিটিতে স্থান পাওয়ার আশায় জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন ১০৮ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৫ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে ২৮ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ জন প্রার্থী হিসেবে অনড় থাকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ঢাকায় ফিরে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি করার ঘোষণা দেন।
সম্মেলন আয়োজনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই কমিটির দেখা এখনো মেলেনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাসে সম্মেলন আয়োজনের এক বছর পরেও কমিটি গঠন করতে না পারার ঘটনা নজির বিহীন। সংগত কারণে চট্টগ্রামের নগর যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, কমিটি কেন ঝুলে আছে ? যদিও এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক মুখ খুলছেন না।
তবে এই কেন'র উত্তর খুঁজতে ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া আরো ১০ বছর আগেই শুরু হয়েছিল। ২০১৩ সালে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও চারজন যুগ্ন আহ্বায়ক সহ একশ জনের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগরে। সেই কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন, দায়িত্ব ছিল সম্মেলন আয়োজনের। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর চেষ্টা করেও সেই আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। সেই দীর্ঘ বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তৎকালীন আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের কাছ থেকে যে বক্তব্য বারবার উঠে এসেছে তা হলো-নগর রাজনীতির সবগুলো বলয়কে সাথে নিয়ে, সম্মিলিত ভাবে, সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে চাওয়া। তৎকালীন নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্য স্বীকার না করলেও নগর যুবলীগের কমিটি গঠন করতে না পারার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল কমিটির পদ বন্টন।
কেন্দ্রে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠিত হওয়ায় পর থেকে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের নেতাকর্মীরা আবারো নগর কমিটির আশায় বুক বাঁধে। মাঝে করোনা মহামারির সময় যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা নগরজুড়ে ব্যাপক মানবিক কর্মকান্ড শুরু করেন।২০২২ সালে সম্মেলনের আগে ও পরে সেই তৎপরতা আরো বেগবান হলেও দীর্ঘদিনে কমিটি গঠন না হওয়ায় এসব কর্মযজ্ঞ শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। কমিটি দিচ্ছি, দিচ্ছে করেই সম্মেলনের পর পেরিয়ে গেছে আরো এক বছর। এই কমিটিতে পদ পাওয়ার আশায় দলীয়, জাতীয় কর্মসূচি গুলোতে পদ প্রত্যাশীরা বিপুল শোডাউন দেখিয়ে যাচ্ছে। আর যুবলীগের কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচি ঘোষিত হলে সেটিকে বাস্তবায়নে রিতিমতন প্রতিযোগিতা শুরু হয় নগর যুবলীগের মাঝে। এসব কর্মসূচি ও নানান মানবিক কর্মযজ্ঞ সফল করতে পদ প্রত্যাশীদের বিপুল অর্থ ব্যয় করতে দেখা গেছে। এসব যুবলীগ নেতারা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা বিতরণ করা থেকে শুরু করে নতুন নতুন মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে কেন্দ্রের সুনজর পেতে চাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রের নির্দেশে পদ প্রত্যাশীরা সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকার বই কিনেছে। মূলত কমিটিতে ভালো পদ প্রাপ্তির আশায় এতো বিপুল অর্থ ব্যয় করছে নগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা৷ তবে কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক পদ প্রত্যাশীরা এখন কিছুটা মন্থর গতিতে এগুচ্ছে।
২০২২ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম নগর সহ দুই সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ৬ মাস পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও ৮ মাস পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের আংশিক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। ফলে এবার বাকি থাকা নগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে আবারো চলছে জোর গুঞ্জন।
ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত নগর যুবলীগের সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে ২৮ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ জন প্রার্থী থাকলেও ঘুরে ফিরে ১৫-২০ জনের নাম শীর্ষ পদে শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ একাধিক নেতা ও মহানগর এলাকার দলীয় সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে নগর যুবলীগের কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদ সহ অন্যান্য পদের জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান নওফেল, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের পাশাপাশি দুইজন সংসদ সদস্য ও দুইজন সহ-সভাপতির পক্ষ থেকে দেয়া তালিকায় থাকা পদ প্রত্যাশীদের মধ্য থেকেই শীর্ষ পদসহ আংশিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অনেকটাই চূড়ান্ত৷ ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোও একই ফর্মূলায় করা হয়েছে৷
কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্তত ৫ জন নেতার সাথে বিগত এক সপ্তাহ যাবৎ প্রতিবেদকের ধারাবাহিক আলাপ চারিতায় নগর কমিটির জন্য বেশ কিছু নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে। এসব তথ্য বিশ্লেষন করে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদস্য পদের জন্য যাদের নাম গুড বুকে স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে তারা হলেন, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম দিদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নগর যুবলীগের সাবেক সদস্য আসিফ মাহমুদ এবং নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু, নগর যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, সাবেক সদস্য সুরজিৎ বড়ুয়া লাবু, সনৎ বড়ুয়া, সুমন দেবনাথ, এ এম শহীদুল কাওসার, শেখ নাছের আহমদ, সাবেক সদস্য নুরুল আনোয়ার, মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল, ইঞ্জিনিয়ার আবু মো. মহিউদ্দিন, জাবেদুল আলম সুমন, নুরুল আজিম রনি প্রমুখ। কমিটিতে পদ প্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম শোনা গেছে৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মুরাদ বিপ্লব, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, নুর মোস্তফা টিনু।
কমিটি গঠনে বিলম্বের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল করা হলেও তার রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তায় (এসএমএস) লিখে, সম্মেলন আয়োজনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটি গঠন করতে না পারাকে আপনাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা মনে করেন কিনা ? প্রশ্ন পাঠানো হলেও তারা কেউ কোন জবাব দেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রের একাধিক যুবলীগ নেতা বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকেই পদ বন্টন করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত৷ চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা যুবলীগের আংশিক কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তারাও একই ফর্মূলায় পদ প্রাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ মূলত যুবলীগের চেয়ারম্যান স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করেই আংশিক কমিটি গঠনের বিষয়ে মত দিয়েছেন৷ কেন্দ্রের তালিকা মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশীদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইতিমধ্যে ঢাকায় প্রেরণ করেছে বলে জানা গেছে৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাসে নগর যুবলীগের আংশিক কমিটি ঘোষনা হতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বাবু/জেএম