সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ ৯ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ২৩ জুন ২০২৫
স্মৃতিবিজড়িত টোকিওর ওতানি হোটেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ৮:৫৮ AM
জাপানে এলে টোকিওর নিউ ওতানি হোটেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান সম্রাটের অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেস ছাড়া কখনোই অন্য কোনো হোটেলে থাকেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। স্মৃতিবিজড়িত ওতানি হোটেলে চারবার ওঠেন তিনি। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও তার এ হোটেলেই ওঠার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সম্রাটের অতিথি ভবন আকাসাকায় থাকার অনুরোধ আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। ফলে ভেন্যু পরিবর্তন করতে হয় তাকে। কিন্তু কেন ওতানি হোটেল শেখ হাসিনার কাছে এত প্রিয়? নাম প্রকাশ না করে সে কথা জানিয়েছেন ঢাকা।

এবং টোকিওতে বসবাসকারী বঙ্গবন্ধুকন্যার ঘনিষ্ঠজনরা। তারা বলেছেন, এই হোটেলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রিয়জনদের স্মৃতি। হোটেলটি জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের খুব কাছে টোকিওর চিয়োদা-কু কিয়োইচো এলাকায় অবস্থিত।

সেটা ১৯৭৩ সালের ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৮ অক্টোবর জাপানে এসে কন্যা শেখ রেহানা ও ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে তিনি এই হোটেলে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই সফরে ছোট রাসেল খুব আনন্দঘন সময় পার করেছিল। শেখ রেহানার সঙ্গে রাসেল ঘুরে বেড়িয়ে ছিল জাপানের কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন তরুণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের স্ত্রী হামিদা হোসেন।

একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সব সদস্যকে। শুধু বেঁচে আছেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। রাসেল ছিল তাদেরই অতি আদরের ছোট ভাই। জাপানে তার যে কী আনন্দ হয়েছিল-শেখ হাসিনা তা জানতেন। কারণ রাসেল ঢাকায় ফিরে জাপান সফরের খুঁটিনাটি বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিল বড় বোনকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মুগ্ধ হয়েছিলেন জাপানিজদের আন্তরিক আতিথেয়তায়।

জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকীর স্মরণে, বাংলাদেশে জাপানের দূতাবাস গত বছর ‘স্বাগত বঙ্গবন্ধু (বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর, ১৯৭৩)’ শিরোনামে বাংলা অডিও এবং জাপানি সাবটাইটেলসহ একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেছে। এই ডকুমেন্টারি ফিল্মে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি উপহার হিসাবে দিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত জাপানি দূতাবাস। এই ফিল্মে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও দেশটির বিভিন্ন পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করে যে খুবই খুশি হয়েছিলেন, তার সত্যতা পাওয়া যায়।

এই সফরে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রদত্ত জাপানি শিশুদের দৈনিক হাত খরচ থেকে বাঁচানো অর্থ পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব খুশি হয়েছিলেন। ডকুমেন্টারি ফিল্মে তার উলে­খ রয়েছে। জাপানি শিশুরা তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দুঃখী বাংলাদেশি বন্ধুদের জন্য ওই অর্থ দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৩ সালের ১৮ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত জাপান সফর করেন এবং জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুয়ে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওহিরা মাসায়োশির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। ঢাকার জাপানি দূতাবাস তাদের ডকুমেন্টারি ফিল্মে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরকে ‘একটি ঐতিহাসিক সফর’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাপান সফরে গিয়ে কিশোরী শেখ রেহানা ও ছোট শিশু শেখ রাসেল টোকিওতে ইকেবানা বা ফুল সাজানোর বিদ্যাসহ জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তারা জাপানের প্রাচীন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তাকাশিমায় দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘কিমোনো’র প্রদর্শনী দেখেও উচ্ছ¡সিত আনন্দ প্রকাশ করেছিল। সেখানে টেমপুরার দোকানে ময়দার গোলায় ডুবিয়ে তেলে ভাজা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ এবং শাক-সবজির তরকারি খেয়েছিল দুই ভাই-বোন। উয়েনো চিড়িয়াখানায় বাঁদরের চালানো রেলগাড়িতে চড়ে এবং কিয়েতোর গ্রীষ্মকালীন রাজপ্রাসাদ ও জাপানি উদ্যানে গিয়ে পুকুরে বহু বর্ণের মাছ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল রাসেল।

বাঁদরের লেজ ধরে টানছে রাসেল-আর পেছন থেকে তার হাত ধরে টানছেন আরেকজন। রাসেলের চোখেমুখে সে কী আনন্দ-চিড়িয়াখানায় ছোট এই শিশুর সে আনন্দঘন দৃশ্যই চিত্রায়িত হয়েছে জাপান সরকারের তৈরি ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘স্বাগত বঙ্গবন্ধুু’তে। সেই সফরের শেষ রাতে নিউ ওতানি হোটেলে নিপ্পন বাংলাদেশ সমিতির চায়ের অনুষ্ঠানে জাপানের জনপ্রিয় ‘আওয়া’ নৃত্য শেষে উৎসবের পোশাক উপহার দেওয়া হয়েছিল শেখ রাসেলকে। আর তা পরে ছোট রাসেলের কী যে আনন্দ!


বাবু/এ আর 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  টোকিও   ওতানি   







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত