পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, পানি মানবতার প্রাণশক্তি এবং বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য যা প্রকৃতি থেকে আহরণ করা হয় এবং মানব ব্যবহারোপযোগী করা হয়। পানির বহুমাত্রিক ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানি দ্রুত শেষ হচ্ছে। বৃষ্টিপাত, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, পুকুর, হ্রদ, বরফগলা পানি ভূ-উপরিস্থ পানির অন্যতম উৎস। সেচ কাজে মাত্র ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার হচ্ছে। বাকিটুকু সরবরাহ হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি থেকে। নদনদী, খাল-নালা, পুকুর-ডোবা খনন ও পুনঃখনন, রাবার ড্যামসহ বিভিন্ন সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে জলাধার সৃষ্টি করে ভূ-উপরিস্থ পানির জোগান বাড়ানো হচ্ছে। সীমিত পানিসম্পদের অপরিমিত ব্যবহার, দূষণ ও অনিয়ন্ত্রিত জলবায়ু সংকটে ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ব, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে। পানির অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ পানি বিধিমালা, ২০১৮ কার্যকরকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ পানি সম্পদের প্রাপ্যতা, গুণগত মান এবং ভূগর্ভস্থ পানির নিরাপদ আহরণ সীমা নির্ধারণের জন্য রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ এই ৩টি জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। কৃষি, শিল্প বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য তিনটি জেলায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের নিরাপদ আহরণ সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, টেকসইভাবে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য অবশ্যই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশের ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ পানি সম্পদের প্রাপ্যতা, গুনগত মান, ভূগর্ভস্থ পানি ধারক স্তরের ব্যাপ্তি ও বৈশিষ্টসহ পানি সম্পদের ব্যাপক তথ্য সরবরাহ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৫০টি মনিটরিং স্থাপনা করা হয়েছে । এ প্রকল্পের আওতায় ৩০টি পাম্পিং টেস্ট করা হয়েছে, যার মাধ্য একুইফার এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানা গেছে। সংগৃহীত এইসব তথ্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর টেকসই সেচ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে,পানি সংকটাপন্ন এলাকায় সেচ কাজে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার পাশাপাশি দক্ষ কৃষি পদ্ধতি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এই সব তথ্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পের অর্জিত ফলাফল বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন, এসডিজির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে বর্ষা মৌসুমে অনেক পানি আসে। শুস্ক মৌসুমে প্রয়োজনের সময় পানি পাওয়া যায় না। সেচ কাজ ব্যাহত হয়। এ সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি ও মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে তুলতে হচ্ছে ভূগর্ভের পানি। এতে ভূগর্ভের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকটের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। এজন্য পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল হক খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের পরিচালক গৌতম চন্দ্র।
বাবু/এসআর