বুধবার ২৫ জুন ২০২৫ ১১ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২৫ জুন ২০২৫
মার্কিন অপতৎপরতায় সুশীল ও রাজনীতিবিদদের হাওয়া, ট্রলের শিকার হাস
বুলেটিন নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩, ৬:৪৪ PM

বাংলাদেশ নিয়ে নানা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের দ্বিচারিতা, উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য ও প্রচারণা থামছেই না। আর তাদের অপতৎপরতার পালে হাওয়া দিচ্ছেন দেশের কিছু সুশীল ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও নেতারা।

মার্কিনিরা যার বন্ধু তার কোনো শত্রুর প্রয়োজন নেই, এই প্রমাণিত প্রবাদ ভুলে যারা তাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন, স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে যখন ছুঁড়ে ফেলা হবে তাদের তখন কি আফসোস করার সুযোগটুকও থাকবে? এদিকে একের পর বির্কিত মন্তব্য করে ট্রলের পাত্র দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অজুহাত তুলে বাংলাদেশি নাগরিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো ভিসা নীতি নতুন করে ঘোষণার পর এ নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। কখনো ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কখনো তাদের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জন্ম দিচ্ছেন নতুন নতুন আলোচনার।

আবার এসব নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কখনো অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছেন তারা। কখনো দিচ্ছেন গোঁজামিলের উত্তর। আবার কখনও সুচতুর কূটনৈতিক চাতুর্যে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রশ্ন।
 
>মার্কিন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কেন প্রশ্ন

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সবশেষ ব্রিফিংয়ে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক মন্তব্য ঘিরে ম্যাথিউ মিলারকে প্রশ্ন করেন বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বেগম জিয়ার প্রেস উইংয়ে কাজ করা মুশফিক ফজল। উত্তরে মিলার বলেন- তার দেশ আশা করে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ।

এই প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সব দেশই কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। তাহলে বাংলাদেশে কেন ব্যতিক্রম হবে। আবার উল্টো প্রশ্নও আসে বাংলাদেশে এমন কি পরিস্থিতি হলো, যাতে মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
 
যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনসহ এমন আরো অনেক দেশেই এখনো মার্কিন কূটনীতিকরা অবস্থান করছেন। কিন্তু সেসব দেশে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ প্রশ্নও তোলে না, মার্কিন প্রশাসনের কোনো উদ্বেগও নেই। শুধু বাংলাদেশের বেলায় এমন প্রশ্ন তোলা অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন অনেকেই।
 
>বিতর্কিত মন্তব্যে ট্রল হচ্ছেন পিটার হাস

এদিকে পিটার হাসের সাম্প্রতিক একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য এবং কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মিম ও ট্রলের পাত্র হচ্ছেন তিনি। এখন যেকোনো সামাজিক বিষয়েও তাকে ঘিরে ট্রল করছেন নেটিজেনরা। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে আর কোনো কূটনীতিক নিজেকে এতোটা খেলো করেছেন বলে নজির পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা যে ভাষায় কথা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিটার হাসের মন্তব্যও একই ধরনের। আবার পিটারের এসব অর্বাচিন মন্তব্যে খুশিতে গদগদ বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতারা। কিন্তু তারা এটা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন, অথবা হয়তো বুঝতেই পারছেন না যুক্তরাষ্ট্র যা বলে কিংবা করে সবই নিজেদের স্বার্থের জন্য। কারো পাশে দাঁড়ানো কিংবা সহায়তা করার কোনো উদাহরণ এখন পর্যন্ত তাদের নেই।
 
>গণমাধ্যম নিয়ে হাসের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে বলে জানান।
 
এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ২৭ সেপ্টেম্বর ইমেইলে একটি চিঠি পাঠান পিটার হাসকে। চিঠিতে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগের বিষয়টি তার মনে এবং সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
 
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে- এই মন্তব্যটি আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাই ব্যাখ্যার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। মার্কিন সরকার এবং রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সবসময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের অটল প্রবক্তা। তাই এই মন্তব্য আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।’

>ঘুষের দায় নিয়ে সেই সিনেটরের পদত্যাগ

পিটার হাস এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের যখন এই অবস্থা, তখন সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে চোখ রাখলে উঠে বব মেনেনডেজ নামে এক ডেমোক্র্যাট সিনেটরের নাম। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের এই সদস্য কদিন আগেও ছিলেন বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হয় তাকে।

এখন তিনি আছেন বিচারবিভাগীয় তদন্তের মুখে। মিশর সরকারের সহায়তা পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তিন ব্যক্তির থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী ঘুষ নিয়েছিলেন তিনি। শুধু এটি নয়, এর আগেও তিনবার নৈতিকস্থলনের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
 
এই বব মেনেনডেজ এক সময় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়েছিলেন ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের কেউ কউ প্রশ্ন তুলছেন, বব মেনেনডেজ টাকার বিনিময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাহলে কি বাংলাদেশের র‌্যাবের ক্ষেত্রেও একই পথ অনুরসণ করেছেন তিনি? অর্থাৎ কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে র‌্যাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন এই মার্কিন রাজনীতিক?
 
প্রশ্ন এ রকমও আসছে, সকল কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভুলে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যেভাবে রাজনৈতিক কর্মীর মতো মন্তব্য করে যাচ্ছেন, সেখানেও কি তবে অর্থের লেনদেনের কোনো যোগ আছে? 
 
>ভিসা নীতি নিয়ে কেন এত আলোচনা

সিনিয়র সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদের মতে, ভিসা নীতি নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো ভালো কোনো চর্চা নয়। তিনি বলেন, কোনো দেশের ভিসা দেয়া না দেয়া, তাদের নিজেদের বিষয়। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে এই ভিসা নীতি ঘোষণা করা অবশ্যই ভালো চর্চা না। এতে ভিসা দেয়া না দেয়ার ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগের আশঙ্কা অনেক বেশি আছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে তারা ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে। আমাদের দেশে ভোট হলো কি না, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তাদের মূল বিষয়, স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি না, বা হবে কি না। এই লক্ষণগুলো ভালো না। এটা দুর্বলের ওপর অত্যাচার।

ভিসা নীতি প্রয়োগের জন্য তিনি বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসেন। সিনিয়র এ সাংবাদিকের মতে, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল না। এখন উন্নয়নের দিক থেকে দুই দেশ মিত্র হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে না। কূটনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, ড. ইউনূসের বিচার এবং এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের কারণে এমনটা হতে পারে।’

বাবু/এ.এস



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত