বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫ ৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
হোলি আর্টিজান: ২০১৬ সালের সেই রাতে যা ঘটেছিল
মশিউর অর্ণব
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩, ২:০২ PM আপডেট: ৩০.১০.২০২৩ ৩:১৫ PM
২০১৬ সালের ১লা জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যারাতে হঠাৎ করে খবর আসে গুলশানে 'সন্ত্রাসীদের সঙ্গে' পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেল এক রেস্টুরেন্টে সশস্ত্র হামলাকারী ঢুকে বেশ ক'জনকে জিম্মিও করেছে।

কিন্তু ঘটনাটা আসলে কী? গুজব নাকি সত্য - সেটি নিশ্চিত হতেও ঘন্টাখানেক সময় চলে গেল।

পরে জানা গেল হামলাকারীরা ওই রেস্টুরেন্টে থাকা বিদেশী নাগরিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে।

এক পর্যায়ে জানা যায় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে।
জঙ্গিদের বোমা হামলায় আহত এক পুলিশ সদস্য

জঙ্গিদের বোমা হামলায় আহত এক পুলিশ সদস্য











জিম্মি সংকটের ঘটনায় ১লা জুলাই সন্ধ্যারাত থেকে দিবাগত সারারাত অর্থাৎ ২রা জুলাই সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের নজর ছিল ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারির দিকে।

রাত ৯টা ৫ মিনিটে গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হামলার খবর পায় পুলিশ। গুলশানের পুলিশের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার আশরাফুল করিম জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

রাত ৯টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক এ'সময় টুইট করেন "পুলিশ ইজ সারাউন্ডিং দ্য এরিয়া, গানফায়ার স্টিল অন"।
গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত আরেক পুলিশ

গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত আরেক পুলিশ









রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

রাত ১০টার দিকে পুলিশ, র‍্যাব এবং আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের কয়েকশো সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেয়।

গণমাধ্যম কর্মীরাও ৭৯ নং রোডের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নেন।

রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন।

গুলশানে হামলার পর ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা 'আমাক' এ পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে।

রাত চারটা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আইএসের দায় স্বীকার
রাতেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত 'আমাক'এ গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে ২০জন নিহত হবার কথা জানায়।
আইএসের দায় স্বীকার

আইএসের দায় স্বীকার








আইএস এর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের 'সৈনিক' বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

২রা জুলাই অভিযানের ঘটনাক্রম

সকাল ৭টা ৩০ মিনিট: রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

৭টা ৪৫ মিনিট: কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
অভিযানের প্রস্তুতি

অভিযানের প্রস্তুতি









সকাল সোয়া ৮টায় রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশী নাগরিক তাঁর মোবাইল ফোনে সেটি ধারণ করেন।

৮টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা।
সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযান

সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযান









৯টা ১৫ মিনিটে অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।
সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’

সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’












সকাল ১০টায় ৪ জন বিদেশীসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মৃতদেহ পাবার কথা পুলিশ জানায়।

১১টা ৫০ মিনিট: অভিযানে জঙ্গিদের ৬ জন নিহত এবং একজন ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় ও জাপানি নাগরিকদের তালিকা

জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় ও জাপানি নাগরিকদের তালিকা










গুলশানে প্রায় বারো ঘন্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে সকালে এক কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আইএসপিআর থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয় রেস্টুরেন্ট থেকে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম
বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মত এই ধরনের নৃশংস হামলা দেখে। খবরের শিরোনাম হয় বিশ্বব্যাপী।

দেশি, বিদেশি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে খবরের প্রধান শিরোনাম, আলোচনার বিষয় হয় গুলশান হামলার ঘটনা।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা টেলিগ্রাফের ২রা জুলাই এর শিরোনাম ছিল- "20 hostages killed in 'Isil' attack on Dhaka restaurant popular with foreigners"
রক্তাক্ত রাতের পর বিধ্বস্ত হোলি আর্টিজান

রক্তাক্ত রাতের পর বিধ্বস্ত হোলি আর্টিজান









দ্যা ইকোনোমিক টাইমস ২রা জুলাই ভোরের দিকে শিরোনাম করে- "ISIS gunmen take hostages at Dhaka eatery; 2 policemen killed"

দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর শিরোনাম ছিল - "After Slaughter, Bangladesh Reels at Revelations About Attackers" 

এভাবে দেশ বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে পরবর্তী কয়েক দিন খবর ছিল বাংলাদেশের গুলশানে ক্যাফেতে হামলার ঘটনা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান
গুলশান হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। যার সাথে সম্ভবত দেশের কেউ পরিচিত ছিলো না।
যেসব জঙ্গিদের পরিকল্পনায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা সংঘটিত হয়

যেসব জঙ্গিদের পরিকল্পনায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা সংঘটিত হয়









বাংলাদেশ সরকারও-জঙ্গি নির্মূলে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ, নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা করা এবং জঙ্গি সন্দেহে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়।

হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে আগের চাইতে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও ঢেলে সাজানো হয় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে আসছে।
হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া ৫ জঙ্গি (বাম থেকে) মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল

হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া ৫ জঙ্গি (বাম থেকে) মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল










ঢাকাসহ সারাদেশে জঙ্গিদের মোকাবেলায় ব্যাপক অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, তিন বছরে অব্যাহত জঙ্গি বিরোধী অভিযানে ৮০জন নিহত এবং তিনশ'র বেশি গ্রেফতার হয়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত