খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে আগামীকাল বুধবার (১ নভেম্বর)। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার (৩০ ও ৩১ অক্টোবর) এই লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইন মাসুম জানান, বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
এ কারণে সোমবার ও মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করে। যদিও কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে।
রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এদিকে, খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী ট্রেন চলাচল শুরু করবে আগামীকাল বুধবার (১ নভেম্বর)। এ লক্ষ্যে খুলনায় গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১০টি বগির ওই ট্রেনে সাত শতাধিক যাত্রী চলাচল করতে পারবে বলে জানা গেছে।
খুলনা রেলওয়ে ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। যে ট্রেনটি বর্তমানে রাত সোয়া ১০টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা যাচ্ছে, ওই ট্রেনটি তার পথ পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে চলবে। এই ট্রেনের টিকিট গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১ নভেম্বর খুলনা থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও আগামী বৃহস্পতিবার বেনাপোল থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে।
এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। বর্তমানে খুলনা বা বেনাপোল হতে ট্রেন যায় যমুনা নদীর ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে, এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলে সময় ও অর্থ-দুইয়েরই সাশ্রয় হবে। এই অঞ্চলের মানুষেরা এতে উচ্ছ্বসিত। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু হয়ে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা ছাড়বে বুধবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতপুর, নোয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থামবে।
আগামী ২ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে ‘বেনোপোল এক্সপ্রেস’। ওই দিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। উভয় পথে ঝিকরগাছা, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা হল্ট, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে ট্রেনটি।
জানতে চাইলে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে খুলনা-ঢাকা রেল রুটটি এখনও অসম্পূর্ণ। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে খুলনা থেকে চেঙ্গুটিয়া-নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। তখন সময় আরো কম লাগবে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অনেক গতি বাড়বে।’