যে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত উন্নয়নের পেছনে মালিক-শ্রমিকদের ঐক্যমত, মতের মিল, কাজের প্রতি ভালোবাসা ও উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক অন্যতম উপসর্গ। বর্তমানে এমনটি আর চোখে পড়ে না। তবে, সম্প্রতি শ্রমিকদের সঙ্গে এক কাতারে মিশে, একসঙ্গে খাবার খেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা।
শ্রমিক-কর্মচারীদের উজ্জীবিত রাখতে গত শনিবার (৪ নভেম্বর) নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসে পরিদর্শনে যান শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা। পরিদর্শনে গিয়েই শ্রমিকদের সঙ্গে সারাদিন একান্ত সময় কাটান তিনি। এদিকে চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শ্রমিকরা। তারা কারখানার উৎপাদন বাড়ানো ও এটিকে আগলে রাখার আশ্বাস দেন চেয়ারম্যানকে।
শ্রমিকরা বলেন, কর্মজীবনে দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। সেসব প্রতিষ্ঠানে মালিকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা বলেছি। কিন্তু দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যেভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে মেশার সুযোগ পেয়েছি, তা বিরল ঘটনা। তিনি আমাদের মতো অতি দরিদ্র শ্রমিকদের সঙ্গে বসে খাবার খেয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়, তার মধ্যে কোনো ধরনের অহঙ্কার নেই। তিনি একজন মানবিক মানুষ। শ্রমিকরা বলেন, দেশের প্রতিটি কারখানার মালিকরা যদি এমন হতো, তাহলে আরো দ্রুত দেশের উন্নতি হতো বলে মন্তব্য করেন শ্রমিকরা।
পরে কারখানা প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। শ্রমিকদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খান তিনি। দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার কারখানা পরিদর্শনের সময় কোম্পানির পরিচালক মইনুল হাসান লাল, নির্বাহী পরিচালক হাসান ইমাম তুহিন, মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ মোসাব্বির হোসেন, মহাব্যবস্থাপক মো. শহীদুজ্জামান, মহাব্যবস্থাপক ওহীদুল হক রুবেল, হেড অব ওয়াশিং অজান্তা ডি সিলভা সঙ্গে ছিলেন।
শ্রমিকদের উদ্দেশে গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে। তবে দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের শ্রমিক-কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। হরতাল-অবরোধ যাই হোক না কেন, এ কারখানা কখনো বন্ধ হবে না। বরং এটি সম্প্রসারণের আরো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস শুধু আমার নয়, আপনাদেরও সম্পদ। এটিকে হেফাজত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তিনি শ্রমিকদের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তাদের যেকোনো সমস্যা জেনে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি একটি কমপ্লেইন বক্স তৈরি করতে বলছি। আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে কমপ্লেইন বক্স জমা দেবেন। আমি বিশ্বের যেখানেই থাকি না কেন, তা আমার কাছে পৌঁছে যাবে। তখনই সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস ও দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, শ্রমিকরা যেকোনো কারখানার প্রাণ। তাদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ থাকা দরকার। আমি বন্ধুর মতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমি বিশ্বাস করি, তারা যদি মনে করেন, মালিকরা তাদের সঙ্গে আছেন, তাহলে তারাও উজ্জ্বীবিত হন, উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা এখন একটা অস্থির সময় পার করছি। এ সময়ে সুযোগসন্ধানী গ্রুপ নানা অপকর্মের মাধ্যমে ক্ষতির চেষ্টা করতে পারে। মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে তারা কোনো ক্ষতি করার সুযোগ পাবে না। তাই সব মালিকেরই উচিত শ্রমিকদের কাছে যাওয়া, আশ্বস্ত করা; তাদেরকে বলা, কারখানার ভালো-মন্দের সঙ্গে শুধু মালিকের সম্পর্ক নেই, শ্রমিকদেরও সম্পর্ক আছে। কারখানা ভালো চললে, তারাও ভালো থাকবেন।
উল্লেখ্য, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস একটি সমন্বিত ওভেন পোশাক কারখানা। এর রয়েছে ওয়েভিং, কাটিং, ওয়াশিং ও ফিনিশিং ইউনিট। এ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কর্মরত; যার বড় অংশই সৈয়দপুর-নীলফামারী অঞ্চলের। স্থানীয় কর্মসংস্থানে কোম্পানিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া এ কারখানায় কিছু বিদেশি টেকনিশিয়ানও কর্মরত আছেন। কারখানাটির মাসিক উৎপাদনক্ষমতা ১৫ লাখ পিস পোশাক। কারখানাটিতে পুরুষ, নারী ও শিশু-কিশোরদের পোশাক তৈরি করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এ কারখানার ক্রেতা। এর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রায় সব মানসনদ।