বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহ ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচলে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে।
পহেলা জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরুর রেওয়াজ থাকলেও এবার বাধ সাধে জাতীয় নির্বাচন। তিন সপ্তাহ পিছিয়ে গত (২১ জানুয়ারি )রোববার থেকে শুরু হওয়া মেলা জমে ওঠে ১৩ তম দিনে, ছুটির বিকালে।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণা মুখর মেলা প্রাঙ্গণ তবে ভিড় বাড়তে থাকে দুপুরের পর। রাজধানীর পাশাপাশি অবস্থানগত কারণে আশেপাশের জেলার বিপুল দর্শনার্থীর সমাগম দেখা গেছে এদিন।
ভৈরব থেকে মেলায় পরিবার নিয়ে এসেছেন ফারদিন রহমান ফারিশ তিনি বললেন, “আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলা যখন হত- বেশ কয়েকবার গিয়েছি। পূর্বাচলে মেলা শুরু হওয়ার পর এবারই প্রথম এসেছি। আসতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
মেলা ঘুরে মনে হয়েছে, আগারগাঁওয়ের তুলনায় পূর্বাচলেই বাণিজ্য মেলার আয়োজন ভালো হয়েছে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা হত শেরেবাংলা নগরে। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালে মেলা করা যায়নি। এরপর মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা চলে যায় পূর্বাচলে।
মোহাম্মদপুর থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন ব্যাংকার মফিজুল ইসলাম, তার জন্য দূরত্ব বেড়েছে; তবে আগ্রহে ভাটা পড়েনি, কমেনি আনন্দও। মফিজুল বলছিলেন, “মোহাম্মদপুর থেকে সিএনজি নিয়ে প্রথমে কুড়িল বিশ্বরোড এসেছি। তারপর বিআরটিসির শাটল বাসে করে বাণিজ্য মেলায় এসেছি, ৩৫ টাকা প্রতি জনের টিকেট রেখেছে বাসে।
“আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। ঘোরার পাশাপাশি মেলায় কেনাকাটাও করব। একসাথে সব পণ্য পাওয়া যায়, এটাই আসলে আনন্দের ব্যাপার।”
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলার প্রধান ফটকে লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। কাউকে দেখা গেছে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, কেউবা এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। আবার কেউ কেউ ঘুরছেন একাই।
অধিকাংশ দর্শনার্থীকে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ছবি তুলে সময় কাটাতে দেখা গেছে। আবার অনেককে পছন্দের পণ্য খুঁজেছেন, কেউ কেউ কেনাকাটাও সেরেছেন।
ক্রোকারিজের দোকান ‘নিক্কেই জাপান’ এর বিক্রয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, “আজ মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থতি বেশ ভালো। মানুষ এলে তো কেনাকাটা করে। আমরা গত ৮ বছর ধরে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের দোকানে মূলত ক্রোকারিজ আইটেম।”
কেমন ধরনের পণ্যে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে প্যাকেজ অফার চলছে। এগুলা ভাই সংসারের আইটেম। নারীরা সব কিছুই নেয়, যার যেটা প্রয়োজন।”
মেলায় আবিদ কর্পোরেশনের শিশু পার্কে উচ্ছ্বাস দেখা গেল বাচ্চাদের। দর্শনার্থী বাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে বেশি।
আবিদ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আজকে মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো। মেলায় এ বছর আমরা শিশু পার্কটি ভিন্ন রূপে সাজিয়েছি। নতুন-নতুন রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে।
“আমাদের এখানে বড় রাইডের সংখ্যা প্রায় ১০টি। ছোট-ছোট রাইড আছে ২০ থেকে ৩০টি। বড়দের এবং বাচ্চাদের জন্য ডল ক্যাচার, গিফট শপ, চকোলেট মেশিন ইত্যাদি নতুন-নতুন রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঘোড়া আছে, ট্রেন আছে, কোস্টার আছে।” সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় গুনতে হচ্ছে এসব রাইডে।
বিক্রেতারা বলছেন, মেলা শুরুর পর থেকে শুক্রবার দর্শনার্থী যেমন বেড়েছে, তেমন বিক্রিও বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি, গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩৩১।
মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে নিয়মিত তদারকি করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় প্রবেশমূল্য বেড়েছে। এবারের মেলায় প্রবেশের টিকেট মূল্য বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ৩০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলায় দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য বিআরটিসির ৬৪টি শাটল বাস চালু আছে। এই বাসে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। আর ফার্মগেইট থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা।