মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
সকলের মতামত নিয়েই হাওর মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ৮:৪৮ PM
পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা হালনাগাদকরণের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত করা হবে এবং চূড়ান্ত করার পূর্বে ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়া হবে।  

তিনি বলেন, ওয়েব সাইটে দেয়ার পরে যারা আজকে এখানে কর্মশালায় আসতে পারেননি কিন্তু যারা প্রকৃতি নিয়ে ভাবেন, পরিবেশ নিয়ে ভাবেন তাদেরকে আমরা জানাবো।  স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত পাওয়ার পরে আমরা হাওরের মহাপরিকল্পনা  হালনাগাদকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলব।  

আজ (সোমবার) ঢাকায় পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত 'হাওর মহাপরিকল্পনা মূল্যায়ন ও হালনাগাদকরণের জন্য সমন্বিত সমীক্ষা' শীর্ষক প্রকল্পের ফলাফলের উপর অনুষ্ঠিত জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। 

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, দেশের ৩৭১ টি হাওরের সীমানা নির্ধারণ হওয়া উচিত। হাওরগুলোতে সীমানা চিহ্নিত করে এগুলো জলাধার কেন্দ্রিক প্রাণাদার হিসেবে আমরা প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করব।  

তিনি বলেন, এক এক হাওরের আসলে  ইকোলজিক্যাল বা পরিবেশগত আবেদন একেক রকম। কোন কোন হাওরে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়   আবার কোন কোন হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকায় শুধু ধান আর ধান চাষ হয়। সংশ্লিষ্টদের  প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হাওরের মাস্টারপ্ল্যানটা বা মহাপরিকল্পনাটা  আসলে সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে সে রকম সহজ করে দিতে হবে। 

উপদেষ্টা বলেন, হাওর হচ্ছে বাংলাদেশের একটা অনন্য ইকো সিস্টেম। হাওর বাংলাদেশের একটা অনন্য ইকো সিস্টেম হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। হাওর হচ্ছে আমাদের জন্য এক অনন্য প্রতিবেশ ব্যবস্থা। 

তিনি আরও বলেন, হাওর সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটনের জন্য খুবই বিখ্যাত হয়েছে। আগে হাওর যারা চিনতো,  জানতো, তারা কিন্তু শুধু মাছের জন্য জানতো, চিনতো। এখন হাওরে পর্যটনের কারণে মাছের উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হাওরে পর্যটনের কারণে মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার উপর একটা প্রভাব পড়তেছিল কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের আইন প্রয়োগের ফলে এটি এখন শৃঙ্খলার মধ্যে আসছে । 

পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর একটা গ্লোবাল হেরিটেজের সম্মান পেয়েছে। হাওরগুলো আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়েছে। 

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আমরা যেমন নদীকে একটা জীবন্ত সত্তা বলি একইভাবে  হাওরও আসলে একটা জীবন্ত সত্তা। হাওর আমাদের একটা নিজস্ব ইকো সিস্টেম। 

হাওরের স্থানীয় মানুষজনকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ মানুষ যদি হাওরে তার যে জায়গাটা আছে এই জায়গাটা বিক্রি করে দেয় একটা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে, আর তারপরে শিল্প প্রতিষ্টান যদি ওখানে একটা  ফ্যাক্টরি বা কলকারখানা বানায় তাহলে বর্ষাকালে তো সে শিল্পের বর্জ্যটা হাওরের পানিতে ফেলবে আর এতে হাওর দূষিত হয়ে পড়বে এবং এতে হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তিনি বলেন, হাওরের ডুজ অ্যান্ড ডোন্ট'স এটা খুব ক্লিয়ারলি আমাদের বলে দিতে হবে। হাওরে মানুষ কি করতে পারবে আর কি করতে পারবে না এটা হাওর এলাকার মানুষকে  সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। 

উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি মনে করি যে এই হাওরটা হচ্ছে মাছের আবাদ আর তাহলে এই হাওরে কীটনাশকের ব্যবহার আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফার্টিলাইজার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই ফার্টিলাইজার বা সারের যে একটা নেতিবাচক প্রভাব মাছের উপর পড়ছে এটি কিন্তু হাওরের কৃষকদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে,  হাওরে ফার্টিলাইজার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাওরে ফার্টিলাইজার ব্যবহার করলে এখানে অন্যান্য অণুজীবের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে এটা আসলে হাওরের কৃষকদের কখনো বলা হয়নি বা তাদেরকে বুঝানো হয়নি। 

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হাওরে চিকিৎসার জন্য একটা হসপিটাল বোর্ড করা যায় কিনা এটা আমরা ভাবছি এবং প্রয়োজনে দেখি আমরা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এ বিষয়ে কিছু করতে পারি কিনা সেটা আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে দেখব।  হাওরে  বনায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে আমরা বন বিভাগের মাধ্যমে হাওরে করবো যেন গাছগুলো তারা দেখভাল করে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান। 

কর্মশালায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরিকল্পনা ও উন্নয়নসহ ঊদ্ধতন  কর্মকর্তাবৃন্দ  পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক,পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা'র মহাপরিচালক, আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জুম প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে কর্মশালায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।

দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হাওর মহাপরিকল্পনা মূল্যায়ন ও হালনাগাদকরণের জন্য সমন্বিত সমীক্ষার ওপর দলীয় কার্যক্রম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত