বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫ ১ শ্রাবণ ১৪৩২
বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
লিপ ইয়ার : কী, কেনো, কবে, কিভাবে?
মশিউর অর্ণব
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:৪৬ PM আপডেট: ২৯.০২.২০২৪ ১:১৯ PM
লিপ ইয়ার, যার আক্ষরিক বাংলা অর্থ ‘অধিবর্ষ’। দিনপঞ্জিকার পরিক্রমায় ৪ বছর পরে এসেছে আরও একটি অধিবর্ষ, আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি বা ‘লিপ ডে’। চলুন পাঠক জেনে নিই লিপ ইয়ার আবিস্কারের ঘটনা, কীভাবে হয় লিপ ইয়ার, এর ইতিহাস কী, লিপ ইয়ার রাজধানী কোথায়... এমন যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর-

" align=














লিপ ইয়ার কী?
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, সাধারণত প্রতি এক বছরের সময়কাল হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড, অথচ প্রচলিত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিমতে বছর হিসাব করা হয় ৩৬৫ দিনে। এভাবে প্রতিবছর প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় গোনার বাইরে থেকে যায় ও চার বছরে সেটা প্রায় এক দিনের সমান হয়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রতি চার বছর পরপর ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করা হয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিমতে, প্রতি চার বছরে একবার ফেব্রুয়ারি মাসে ও বাংলা সনমতে ফাল্গুন মাসে এই অতিরিক্ত ১ দিন যোগ হয়। 
২৯ ফেব্রুয়ারি 'লিপ ডে'

২৯ ফেব্রুয়ারি 'লিপ ডে'










আরও সহজ করে বলতে গেলে, মূলত সৌরজগতের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্যই লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিন। ৩৬৫ দিনে বছর ধরা হলেও সব মিলিয়ে সময় লাগে ৩৬৫.২৪২২ দিনের মতো। যা প্রতি চার বছরে একটা বাড়তি দিন যোগ করে।

লিপ ইয়ার আবিস্কার কবে?
রোমের ক্ষমতাধর শাসক জুলিয়াস সিজারের শাসন আমল শুরুর আগে ৩৫৫ দিনে বছর গণনা করা হত। এতে করে প্রতি দুই বছর পরপর ২২ দিনের মাস যুক্ত হতো। যা একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল। এর সমাধানে এ শাসকের নির্দেশেই ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু হয়। যে অতিরিক্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা থেকে যায়, তা মিলিয়ে নিতে চার বছর পরপর একটা অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যুক্ত করা হয়। 
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার









দেখা গেল, পার্থিব বছরের সময়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রায় পুষিয়ে দেয়া যায় চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে একটা দিন যোগ করে দিলে। আর সেই থেকেই জন্ম হলো ২৯ ফেব্রুয়ারির। যার নাম ‘লিপ ডে’। আর এই দিনটি যে বছরে যুক্ত হয়, সেই বছরটির নাম ‘লিপ ইয়ার’।
কোন কোন বছর লিপ ইয়ার?
গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি

গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি










গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে যেই বছরগুলো ৪ দিয়ে বিভাজ্য, সেগুলোই লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে ঠিক ৩৬৫.২৫ দিন নেয় না, কিছুটা কম সময় নেয়। তাই চার বছর পর পর বছরে একদিন বেশি হিসাব করলে প্রতি চারশ বছরে তিনদিন বেশি হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান করতে যেসব বছর ১০০ দ্বারা বিভাজ্য, কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয়- তাদের লিপ ইয়ার হিসেবে গণনা করা হয় না।

লিপ ইয়ার ‘রাজধানী’ কোথায়?
টেক্সাসের অ্যান্থনি শহর লিপ ইয়ার বা ‘অধিবর্ষের রাজধানী’ বলে স্বীকৃত। ১৯৮৮ সালে এই শহরের বাসিন্দা ও লিপ ইয়ারে জন্ম নেয়া ম্যারি অ্যান ব্রাউন চেম্বার অব কমার্সের কাছে যান শহরে একটা লিপ ইয়ার উৎসবের আবেদন নিয়ে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়। সেময় অ্যান্থনিকে ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্বের লিপ ইয়ার রাজধানী হিসেবে।
 
টেক্সাসের এন্থনি

টেক্সাসের এন্থনি









গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছাড়াও অন্যান্য ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারের প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক ইরানের ক্যালেন্ডারে প্রতি ৩৩ বছরে ৮টা লিপ ডে আছে। 
২৯ ফেব্রুয়ারি টেক্সাসে উৎসব হিসেবে পালিত হয় 'লিপ ডে'

২৯ ফেব্রুয়ারি টেক্সাসে উৎসব হিসেবে পালিত হয় 'লিপ ডে'










এ ছাড়াও ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশের যে বাংলা পঞ্জিকাবর্ষ তাতেও লিপ ইয়ার এমনভাবে রাখা হয় যাতে লিপ ডে সব সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি থাকে।

ইতিহাসে এসেছিল ‘৩০ ফেব্রুয়ারি’
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার এমন সময় এসেছিল যখন ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যোগ করতে হয়েছিল। সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যুক্ত করেছিল। 
১৭১২ সালের '৩০ ফেব্রুয়ারি'

১৭১২ সালের '৩০ ফেব্রুয়ারি'














তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে একটি বিপ্লবী ক্যালেন্ডার চালু করেছিল। যেখানে পাঁচ দিনে এক সপ্তাহ নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং সব মাস ধরা হয় ৩০ দিনে। এতে বছরের শেষে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় দিন বাড়তি থেকে যায়, যা 'ছুটি' হিসাবে বিবেচিত হয়। 
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে পাওয়া যায় ৩০ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে পাওয়া যায় ৩০ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ










সাত দিনের সপ্তাহ বাতিল করার উদ্দেশ্য ছিল সপ্তাহে ছুটির দিনের বাধা ছাড়াই শিল্প উৎপাদন উন্নত করা। এর বাইরে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। রে ব্র্যাডবিউরির ছোট গল্প "দ্য লাস্ট নাইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড"-এ ৩০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। 
দিনটি শুভ নাকি অশুভ এ নিয়ে অবশ্য কোনো মতবিরোধ নেই

দিনটি শুভ নাকি অশুভ এ নিয়ে অবশ্য কোনো মতবিরোধ নেই









ব্রিটিশ লেখক জন রোনাল্ড রিয়েল টলকিয়েন তার ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অফ দ্য রিংসে’ ৩০ ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখ করেন। তার বই অনুযায়ী হবিটরা একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করে যেখানে ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ৩০ দিনে। তবে বাস্তব জগতেও এই তারিখের ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
এপিটাফেও পাওয়া গেছে ৩০ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ

এপিটাফেও পাওয়া গেছে ৩০ ফেব্রুয়ারির উল্লেখ









এছাড়াও, যখন কোন মানুষের মৃত্যুর তারিখ অজানা থাকে তখন তাদের সমাধি প্রস্তর বা এপিটাফে জন্ম তারিখ হিসেবে ৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রেকর্ড করা হয়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত