মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
রোজায় বাড়তি চাহিদার জোগান দিচ্ছে দেশি ফল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১:০৩ PM
এক সময় মৌসুম ছাড়া দেশে থাকতো না ফলের জোগান। মৌসুম নয়, এমন সময়ে রোজা হলে তখন নির্ভর করতে হতো বিদেশি ফলে। অর্থাৎ রমজানে ফলের বাড়তি চাহিদা পূরণ হতো আমদানির মাধ্যমে। তবে সময়ের পরিবর্তনে কৃষকরা এখন দেশি ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিকেও ঝুঁকছেন।

এবার রোজায় বাড়তি ফলের চাহিদা সামলাচ্ছে দেশি ফল। আগে যেখানে শুধু ‘মধু মাসে’ (মে-জুন) বাজারে দেশি ফলের খোঁজ মিলতো, এখন সে চিত্র পাল্টেছে। বছরজুড়ে বাজারে নানান ফলের জোগান থাকছে। বিশেষ করে ২ দশক ধরে ফলের বাণিজ্যিক চাষের সাফল্যের কারণে দেশে ফল উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে বলা যায়। এ কারণে এ বছর মৌসুম না হলেও ইফতারিতে আমদানি করা ফলের ওপর নির্ভরশীল ততটা হতে হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের আয় বাড়তে থাকলে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। আবার নগরায়ণের কারণেও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটছে। এখন মানুষের ফলমূল খাওয়া অনেক বেড়েছে। এ বছর রোজায় দেশে চাষ হওয়া আপেল, কমলা, আঙুর, মাল্টা, বেদানা, পেয়ারা, পেঁপে, বরই, আনারস, কলা, তরমুজসহ অন্যান্য ফল কেনার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এসব দেশি ফলের কারণে বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে।

জাম, লিচু, বরই, কামরাঙ্গা, কদবেল, লেবু, আনারস, লটকন, আতা ও সফেদার মতো ফলগুলোও বেশি পরিমাণে চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এমনকি ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে স্ট্রবেরি, ড্রাগন ও মাল্টার মতো বিদেশি ফলের চাষও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে

কথা হয় রাজধানীর বাদামতলীতে খাজা ফ্রুট স্টোরের স্বত্বাধিকারী, আমদানিকারক ও পুরোনো ব্যবসায়ী বাইরাত মিয়ার সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সাউথ আফ্রিকার সবুজ আপেল আমরা আমদানিকারকরাই বিক্রি করছি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি। কাশ্মিরের পিয়ার বেচি ২৯০ থেকে ২৯৫ টাকা। ভারতীয় আঙুর আমাদানিতে খরচ ২৪০ টাকার ওপরে। এসব খুচরা বাজারে আরও ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে ক্রেতারা কিনছেন।

তিনি বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করা ও ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ার কারণে এবার ফলের আমদানিতে খরচ রেকর্ড পরিমাণ বেশি। সে তুলনায় দেশে উৎপাদিত ফলের দাম অনেক কম। সাশ্রয়ী ও জোগান বাড়ায় এখন দেশি ফলের কারবার বড় হচ্ছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ এখন বার্ষিক কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জাম, লিচু, বরই, কামরাঙ্গা, কদবেল, লেবু, আনারস, লটকন, আতা ও সফেদার মতো ফলগুলোও বেশি পরিমাণে চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এমনকি ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে স্ট্রবেরি, ড্রাগন ও মাল্টার মতো বিদেশি ফলের চাষও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

একদিকে বিদেশি ফলের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে দেশি ফলের ব্যাপক জোগানের কারণে উচ্চবিত্তরা ছাড়া এখন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ নির্ভর করছে দেশি ফলের ওপর।রামপুরা বাজারে ফল কিনতে এসে ইউসুফ হোসেন বলেন, এখন আনারস, পেয়ারা, পেঁপে নিত্যদিনের ইফতারের সঙ্গী। এগুলোর দামও কম, খেয়েও তৃপ্তি। বাজারে এখন অহরহ ফল মিলছে, যা আগে এত ছিল না।

এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, এই রমজানে বিদেশি ফলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশি ফল কেনার প্রবণতা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এসময় প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টনের মতো পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের দ্বিগুণ। এছাড়া পেঁপে ও আনারসের বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। দেশি সাগর ও সবরি কলার বিক্রিও অনেক বেড়েছে।বিবিএস-এর খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের প্রতিদিনের ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৬ সালের হিসাবে একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ গ্রাম।

ফল ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন বলেন, এ বছর আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুরের মতো বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের সংকটে এলসি খোলা যায়নি। গত বছরের ১০২ টাকার ডলার, এখন ১২০ টাকা। আমদানি আরও কমবে এ অবস্থা থাকলে। এসময়ে মানুষের ভরসা হয়ে উঠছে দেশি ফল।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত