সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘রাষ্ট্রকে গঠন করতে হলে সকলকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতামত গ্রহণে ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন গঠন করতে হবে। জনগণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র গঠন হতে পারে না। সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি কথা বলতে শুরু করবে। বাইরে থেকে কমিশন-টমিশন দিয়ে কোন কাজ হবে না।’
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে প্রফেসর কে আলী ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ: বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. শেখ আকরাম আলীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম।
ফরহাদ মজহার বলেন, আগামী দিনে দুইটা নির্বাচন লাগবে। একটা হলো গণপরিষদ নির্বাচন, যেখানে আমরা নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে পারি। আরেকটা হলো সরকার নির্বাচন। রাষ্ট্র গঠনের নির্বাচন আগে, তারপর আসবে সরকার নির্বাচন। এই রোডম্যাপ জনগণের পক্ষ থেকে দেওয়া হলো। এই রোডম্যাপ যদি না মানা হয় তাহলে ভয়ানক বিপদে পড়বো।
সংবিধান পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আজ এত বড় একটি অভ্যুত্থান হয়ে গেছে, আমরা এত রক্ত দিলাম– কিন্তু দিন শেষে শেখ হাসিনারই সংবিধান পেলাম। কীকরে এই সংবিধান এখনও থাকে! যাদের উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা মূলত রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা। আর এই রাষ্ট্রপতিকে শেখ হাসিনা নিয়োগ করে গেছেন। উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণের সময় বলেছেন, আমরা সংবিধান সংরক্ষণ করবো। কিন্তু এই সংবিধান শেখ হাসিনার সংবিধান।আমরা পরিষ্কার বিষয় নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে চেয়েছি। আমরা ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও হাসিনার আইন চাই না। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখনও অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিচ্ছে না, তাদেরকে কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে না? আমরা এখনও কেন ব্রিটিশি কলোনিয়াল রাষ্ট্র ব্যবস্থা রেখে দিয়েছি? সমাজে সব সময় ফ্যাসিবাদ থাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদে যেমন আছে তেমনি মুসলিমদের মধ্যেও আছে। অনেকে শরিয়া পুলিশ সেজে নারীদের কোন পোশাক পড়তে হবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। মাজার ভাঙা হচ্ছে। নিজের কথা মানতে হবে সেটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। বর্তমান দুর্বল রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিচ্ছে না।
এ সময় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ গ্রহণ করেছেন, এ কারণে আমি একটু ব্যথিত। ড. ইউনুস যদি রাজু ভাস্কর্য অথবা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে উপদেষ্টারাসহ ছাত্র-জনতার সামনে নিজেকে সরকার ঘোষণা করতেন তাহলে খুব ভালো হতো।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের একটা সোনালি সময় এসেছে। আমাদের একটা কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। আমাদের সংবিধানে অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। এখন আমাদের সামনে যে সময় রয়েছে, সংবিধান সংস্কার করা প্রয়োজন। ক্ষমতার দ্বিকেন্দ্রীকরণে সংস্কার করতে হবে।
উপ-সচিব ড. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের আইন আছে, বিচার বিভাগসহ সবকিছু আছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর মানুষ আবার খারাপ কাজ করে। আমার মনে হয়, মানুষের ভেতরে সমস্যা রয়েছে, মানুষকে ভালো করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্র্বতী সরকার বর্তমানে ছয়টা কমিশন গঠন করেছেন। সে জন্য সরকারকে আমাদের সাহায্য করা প্রয়োজন।