হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে করা ডিএনএ টেস্ট তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এখন পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করা যাবে।
প্রতিবেদন দাখিলের পর বুধবার (৪ ডিসেম্বের) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেওয়া আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্ট করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রুলে সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেওয়া আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্ট করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আবুল হারিছ চৌধুরীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না ও তার নামে থাকা ইন্টারপোল রেড নোটিশ কেন প্রত্যাহার করা হবে না এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেন কবরস্থ করা হবে না; এসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে বলেন, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার ওদের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এটা নিয়ে যেন কখনও প্রশ্ন না ওঠে, সেটা ডিটারমিন করার জন্য এ রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে— সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনও মানুষ জিজ্ঞেস করে, সত্যিই কি মারা গেছেন? আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি।
প্রসঙ্গত, বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশেই ছিলেন বিএনপির এই নেতা। নতুন নাম মাহমুদুর রহমান ধারণ করেই পান্থপথে কাটিয়েছেন জীবনের বাকিটা সময়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সাড়ে তিন মাস পর মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। গোপনে দাফন করা হয় সাভারে। হারিছ চৌধুরীর পরিবার সূত্র এসব তথ্য জানায়।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী বলেন, তার বাবা হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন। যদিও তার চাচা আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, হারিছ ঢাকায় নয়, লন্ডনে মারা গেছেন। এই খবর প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উড়িয়ে দেন। দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন গোয়েন্দারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৪ বছর দেশেই ছিলেন। নিজেকে মাহমুদুর রহমান হিসেবে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। পান্থপথের বাসায় কাজের বুয়া ও একটি ছেলেসহ থাকতেন। হারিছ নিজেকে অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন। বাসার আশেপাশের লোকজনও তাই বিশ্বাস করতো। লম্বা সাদা দাঁড়ি ও পাকা চুলে হারিছ চৌধুরীকে চিনতে পারেননি কেউ। পরিবারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হতো খুব কম।