ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশের জেরে সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার ‘সব্যসাচী’ প্রকাশনীর স্টলটি তৌহিদী জনতার বিক্ষোভের মুখে সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সব্যসাচী প্রকাশনী এবার তসলিমা নাসরিনের ‘চুম্বন’ নামের একটি বই প্রকাশ করেছে। হামলা চলাকালে স্টলটিতে ছিলেন লেখক শতাব্দী ভব। তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি সংক্রান্ত প্রশ্নকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ লোকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার। এ সময় তার ক্ষমা চাওয়ার দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে এই লেখক হাতজোড় করেন এবং পুলিশ তাকে নিয়ে চলে যায়। এর পরপরই সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টলটি।
সাময়িক বন্ধ রাখা স্টলটির ব্যাপারে মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মবের মুখে পুলিশ সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিল। চূড়ান্তভাবে সব্যসাচীর স্টল বন্ধের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ এখনো নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
সব্যসাচীর স্টলে হামলা চালানোর ঘোষণা আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছিল। কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকেই এই হামলার ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মুখে আজ বিকেলে তসলিমা নাসরিনের সব বই স্টল থেকে সরিয়ে নেন সব্যসাচীর প্রকাশক অভিনেত্রী মেহরান সানজানা। আজ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
এসময় লেখক শতাব্দী ভবকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়
গতকাল রাতেই হুমকিসম্বলিত কিছু ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিণশট যুক্ত করে ফেসবুকে প্রকাশক মেহরান সানজানা লেখেন, ‘হুমকির মুখে সব্যসাচী। সব্যসাচী আমার সন্তান। জানি না এবার এই সন্তানকে মেলার মাঠে রাখতে পারবো কিনা! যাইহোক, প্রশাসনের কেউ আমার লিস্টে থাকলে ইনবক্স করেন।’
বইমেলা টাস্ক ফোর্সের আহবায়ক ড. সেলিম রেজা বলেন, ‘স্টলটি মবের মুখে পুলিশ সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিল। চূড়ান্তভাবে সব্যসাচীর স্টল বন্ধের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ এখনো নেওয়া হয়নি। আজকের মেলা তো শেষই। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’
এদিকে, মবকে সতর্ক করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিজের ফেসবুক পেইজে লেখেন, অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসাবে ট্রিট করা হবে। আজকের ঘটনার পর আর কোনো অনুরোধ করা হবে না। আপনাদের কাজ না, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করব। রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না।