পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘একটি সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া কীভাবে চলবে? পৃথিবীর কোথায় আছে, পুলিশ ছাড়া চলে? পৃথিবীর কোথাও এটা নাই, এই দেশের মানুষকে এটা বুঝতে হবে, যারা বুদ্ধিমান, তারা অবশ্যই বোঝেন। তবে কিছু লোক আছে, তারা মনে করে পুলিশ এখন আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে, পুলিশ তাদের প্রতিপক্ষ। দেশের অপরাধ যদি দমন করা না হয়, শৃঙ্খলা যদি না হয় কোন নাগরিকটা থাকতে পারবে, এই ১৮ কোটি লোকের একটা লোকে ঘুমাতে পারবে? আপনারও তো খেয়াল করেছেন, যখনই অপরাধ বেড়ে যায় তখন কি রকম শুরু হয়। তখন রাত জেগে নিজেদেরকে সারা রাত পাহারা দিতে হয়। এই দায়িত্বটুকু আমার। এখন যদি দেশের কিছু লোক আমাকে যারা ভুল বোঝে, আর তারা যদি আমাকে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়, তাহলে পুরো সমাজটাই শেষ হয়ে যাবে। এই জিনিসটা তাদের বুঝতে হবে।’
গাজীপুর মহানগরীর মোঘরখাল (ভোগড়া বাইপাস) শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ কার্যালয়ে বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘এখনও পুলিশ জায়গায় জায়গায় কাজ করতে যাচ্ছে। সেখানে পুলিশ আক্রমণের শিকার হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ আইনের নিয়ম ভঙ্গকারীদের কাছে যাচ্ছে, তাদেরকে বলছে আপনি আইন মেনে চলুন, সেখানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। আইন না মানার একটা প্রবণতা চলে আসছে। তারা মনে করছে, পুলিশ জনবিরোধী কাজ করছে, এখন আমরা আমাদের মতো চলবো, পুলিশ লাগবে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল।’
দেশবাসী ও নাগরিক সমাজের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদেরকে (পুলিশকে) কাজ করতে দেন। অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য এখানে আছি। কীভাবে সমাজে স্থিরতা আসবে, আমরা কিভাবে কার্যকরী ইলেকশনের দিকে আগাবো? যদি আমরা স্থিতিশীলতা (স্ট্যাবিলিটি) না আনতে পারি, স্থিতিশীলতা আমাকে আনতে হবে, কেন কাজ করতে দিচ্ছেন না? এটা যুক্তিহীন একটা কাজ, পুলিশ মানুষের শত্রু নয়, আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমি বিনীত অনুরোধ করি দেশবাসীর কাছে, আমাদেরকে কাজ করার অনুমতি দেন। আপনাদের ছেলে-মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, অন্যথায় সবকিছু ভেঙে যাবে।’
শ্রমিকদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, ‘আপনারা (শিল্প পুলিশ) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ যাত্রায় আমরা সঙ্গে পেয়েছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে, বিশেষ করে নবম পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা জানেন, শ্রম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও মার্চ মাসের আংশিক বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করবে। আপনাদের মাধ্যমে আমি সব শ্রমিক ভাই ও বোনদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তাদের এই ন্যায়সঙ্গত পাওনা আদায়ের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনায় আছি এবং আপনাদের পাশে থাকব।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পখাতের সব স্টেকহোল্ডার এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সবার প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা কোনও গুজবে কান দেবেন না। আপনারা নিজ কর্মস্থলের ক্ষতি করবেন না। ভাঙচুর করে প্রিয় কর্মস্থলের কোনও ক্ষতি হতে দেবেন না। আমরা দেখেছি, গুজব ছড়ানোর কারণে অনিয়মতান্ত্রিক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো হয়। এখানে আমি সাংবাদিক বন্ধুদেরও সহযোগিতা কামনা করছি। এরকম গুজবের বিষয়গুলো আপনারা যেন সমাজের সামনে তুলে ধরেন, সেজন্য আপনাদের আহ্বান জানাই। যদি এরকম গুজব ছড়িয়ে ভাংচুর চালানো হয় তাহলে আমরা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যারা ভাংচুর করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। রাস্তা অবরোধের মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনও কাজ করা যাবে না। সমাজের সবার প্রতি আমার আবারও আহ্বান, পুলিশকে সহযোগিতা করুন, কাজের পরিবেশ তৈরি করুন, পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না, পুলিশের প্রতি আক্রমণ করবেন না। আইন ও সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। দেশ গঠনে আমাদেরকে দেশের সেবা করার সুযোগ দিন।’