একাত্তর ও চব্বিশের পরাজিত শক্তির সঙ্গে কোনো আপস নেই উল্লেখ করে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলতে চাইছে।
মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের জন্ম শত্রুরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করেছে। ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়। একাত্তর আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। একাত্তর কখনো মুছে ফেলা যাবে না। চব্বিশের আন্দোলন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূরক। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যদি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান দিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট হওয়া ঐক্যে ফাটল ধরবে। একাত্তর এবং চব্বিশ উভয়কে ধারণ করলেই কেবল জাতীয় ঐক্য অর্থবহ হবে।
তারা বলেন, ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের ছত্রছায়ায় ফ্যাসিবাদরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের রক্তাক্ত বিপ্লবের পর দেশের অতীত ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে। বলা হয়েছে দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আসলে আমরা স্বাধীনতা ফেরত পেয়েছি। প্রকৃত স্বাধীনতা আমরা ৭১ সালেই অর্জন করেছি। মূলত ৭১-এর পরাজিত শত্রুরাই দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। ৭১ আর ২৪ এক বিষয় নয়। বরং এসব বলে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত লাখো শহীদ এবং যাদের সম্ভ্রমহানি হয়েছে তাদের অসম্মান করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৪টায় নগরীর জিয়াহল চত্ত্বর (শিববাড়ি) মোড়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে মৌন মিছিল পুর্ব সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্টবিরোধী সফল আন্দোলনের ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। এই সফল আন্দোলনের মূল নায়ক তারেক রহমান। বিএনপি জনগণের দল। মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে আসছে। সেবা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চায়।
একটি চক্র বিএনপির অর্জন নষ্ট করার জন্য ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিবাদের দোসরদের উৎখাত করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? এনসিপি যারা করেন, যাদের বয়স এখনো ৩০ এর কোটা পার হয় নাই, তারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশের সবচে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই বিএনপি যদি আপনাদের শেল্টার না দেয়, বাংলাদেশের কোনো জেলায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের কারণে আপনারা কিন্তু ঢুকতে পারবেন না।
বক্তারা আরো বলেন, একটি ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল। যাদের জন্ম পাকিস্তানে, ৭১ সালে যারা আমার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত নিয়েছিল, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে যারা মুনাফিকি করেছিল, তারা আবার নতুন করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়; মিথ্যা অপপ্রচার করে, ভিন্ন ভাষায় আমাদের দল সম্পর্কে কথা বলে আপনারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ধর্ম ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে জনগণের কাতারে আসুন। যুগে যুগে যারা বেঈমানি করেছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, মন্দির পুড়িয়েছে, হিন্দুদের সম্পদ লুট করেছে, আবার তারা বাংলাদেশের মাটিতে নতুন করে খেলা শুরু করেছে। এই খেলা সফল হবে না; ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন হবে এবং জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, আলী আসগর লবি, রেহানা ঈসা, এড. মোমরেজুল ইসলাম, শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, শ্রমিকদলের মজিবর রহমান, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, মহিলা দলের নার্গিস আলী, কৃষকদলের আক্তারুজ্জামান সজিব তালুকদারসহ অনেকে।